তানোরে চাঁদ রাতে চার শিশু শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করেছে শিক্ষক।
রাজশাহীর তানোরে চাঁদ রাতে পটকা পুটিয়ে আনন্দ উৎসব করার সময় চার শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পিটিয়ে জখম ও গলা চেপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি সরনজাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত সোমবার উপজেলার সরনজাই ইউপির কাসারদিঘি গ্রামে ঘটে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রহরের ঘটনা।এঘটনায় শিক্ষক জিয়াউর রহমানের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী। এতে করে উভয়ের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বলেও আশঙ্কা গ্রাম বাসীর।
জানা গেছে, মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই উৎসব পালনে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। তবে শিশুদের উৎসব চলে নানা ভাবে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকার শিশুরা মরিচ পটকা ফুটিয়ে উৎসব পালন করেন। তারা চাঁদ দেখার সাথে সাথে এসব পটকা ফুটিয়ে ব্যাপক উৎসব আনন্দ উদযাপন করেন। বিগত দু বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের জন্য সেভাবে উৎসব হয়নি। সবকিছু কাটিয়ে এই ঈদে চলে প্রচুর আনন্দ উৎসব।
গত সোমবার ঈদের চাঁদ দেখা মাত্রই উপজেলার সরনজাই ইউপির কাসারদিঘি গ্রামের মুরাদুল ইসলামের পুত্র সরনজাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন, ওই গ্রামের আলহাজ মোল্লার ছেলে সরনজাই প্রাথমিক স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন, আতাউর রহমানের পুত্র ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তুহিন আলী ও আলমাস আলীর পুত্র ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল হোসেনসহ বেশ কিছু শিশু শিক্ষার্থীরা পটকা ফুটিয়ে উল্লাস করছিল। এসময় শিক্ষক জিয়াউর ওই চার শিক্ষার্থীকে ধরে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে আছাড় মারেন। ওই সময় শিক্ষার্থীদের ডাক চিৎকারে অভিভাবকসহ গ্রামের লোকজন উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছেন।
৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাব্বি জানান, এত জোরে জোরে কিল ঘুষি মেরেছে আমার পিঠে কালো দাগ হয়ে আছে। এমনকি কিল ঘুষি লাথি মারার পর গলা চেপে ধরে মেরে ফেলার জন্য আছাড় মারা শুরু করেন। তার পিতা মুরাদুল বলেন তারা অবুঝ।
ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই। সামান্য পটকা ফুটানোর জন্য আমার ছেলেকে মেরে মারাত্মক জখম করেছে। তার পিঠে কালশিরা পড়ে রয়েছে। এত মারার পর গলা টিপে আছাড় মারে। আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা গ্রামে বসে মিমাংসা করতাম, কিন্তু উল্টো আমাদেরকেই হুমকি ধামকি দিচ্ছে। ৩য় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম জানান, শরীরের প্রতিটি জায়গায় কিল ঘুষি লাথি মেরেছে স্যার। শুধু এমার না ক্লাসেও পড়া পারলেও মারে, না পারলেও মারে। স্যারের ভয়ে অনেকে ডবল প্যান্ট সার্ট পরে যান। একই ধরনের কথা বলেন ৫ম শ্রেণীর ছাত্র তুহিন। তবে মার খেয়ে শিক্ষকের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়নি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল।
সিয়ামের পিতা আলহাজ মোল্লা ও তুহিনের পিতা আতাউর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একজন শিক্ষক হয়ে অবুঝ শিশু শিক্ষার্থীদের মারতে তার বিবেকে বাধেনি। চাঁদ রাতে কেউ এভাবে মারতে পারে না। আমরা তার চরম শাস্তি চাই।
গত বুধবার রাত নয়টার দিকে কাসারদিঘি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে প্রবেশের মোড়ে শতশত জনগন শিক্ষকের বিচার ও শাস্তি মুলুক বদলির দাবিতে একট্রা হয়ে জড়ো হয়ে আছেন। তারা বলেন তার শিক্ষকতা করার কোন যোগ্যতা নেই। তিনি কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অমানবিক ভাবে মেরেছেন। তারা শিক্ষিত পরিবারের লোক। তার বাবা অবশর প্রাপ্ত শিক্ষক, তার ভাই তানোর কলেজের শিক্ষক, আরেক ভাই মেম্বার।
শিক্ষক যদি অমানুষ হয় তাহলে তাকে রাখার কি দরকার। বেশকিছু ব্যাক্তিরা জানান, শিক্ষক জিয়াউর ক্লাসেও পেটান। তার ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না। আবার কোন শিক্ষার্থী মার খেয়ে অভিভাবকদের বললে তার উপর নামে নির্যাতনের খড়গ। তারা আরো বলেন গ্রামবাসীর সাক্ষর নিয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাহী কর্মকর্তা, স্হানীয় সাংসদ ও শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত শিক্ষক জিয়াউর রহমান জানান, তাদেরকে পটকা ফুটাতে নিষেধ করলেও তারা না শোনার জন্য শাসন করা হয়েছে বলে দায় সারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান এঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি, পেলে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হবে। তারপরও খোজ খবর নেওয়া হবে ঘটনার বিষয়ে।