শিরোনাম
Kesalahan Fatal Saat Bermain Slot Gacor yang Harus Dihindari উল্লাপাড়ায় ঈদের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত-১১। দারুল ক্বিরাআত প্রতিযোগিতায় গুলবাগ বাইতুর রহমত জামে মসজিদে প্রথম পুরস্কার পেল শিশু হালিমা। বিএনপি নেতা লোকমানসহ ৫০ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা,গ্রেফতার-৪১। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ডিমলায় বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল। রায়পুরায় অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের বন্ধ করলো প্রশাসন নিজাম খাঁনের বাবা-মার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল। মাধবপুরে ওয়াচ টাওয়ার পরিদর্শনে জেলা  পুলিশ সুপার। বনগ্রাম দাখিল মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি হলেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ খিজির। সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সৈয়দ গালিব এর মৃত্যু।
বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

ফিরে আসুক পারিবারিক অনুশাসন।

রিপোটারের / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের তারিখ ও সময় : শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

জুলফিকার বকুল

শিক্ষক, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল, গাজীপুর।
——————————————————
কিশোর অপরাধ হলো বিশেষ ধরনের অস্বাভাবিক বা সমাজ বিরোধী আচরণ, যা আইন কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার নিচের কিশোর-কিশোরী দ্বারা হয়ে থাকে।
অপরাধ বিজ্ঞানী Bisller- এর মতে, ‘প্রচলিত সামাজিক নিয়ম-কানুনের উপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের অবৈধ হস্তক্ষেপই কিশোর অপরাধ।’

একটি সন্তান জন্ম হওয়ার পর তাকে ঘিরে পরিবারের একটি স্বপ্নের সূচনা হয়।যে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পরিবারকে কঠোর পরিশ্রম ও দীর্ঘ সময়ের সাথে লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত। কারণ, একটি সন্তান পরিবারের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের অভিভাবক হয়ে গড়ে উঠে। কাজেই জীবনবোধ থেকে চিন্তা করলে এ মহান দ্বায়িত্ব পালনই একটি পরিবারের মূখ্য কর্তব্য। তবুও নানা প্রতিকূলতায় এ কর্তব্য পালনে অনেক সময় ব্যত্যয় ঘটে।কিন্তু দিন দিন আমাদের দেশে যেভাবে কিশোর অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে তা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হয়ে জাতি মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়বে।মর্যাদাশীল শিক্ষিত সুশীল জাতি গঠনে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতার অংশ হিসেবে সরকারের গৃহিত উদ্যোগের পাশাপাশি স্ব-প্রণোদিত হয়ে সুশৃঙ্খল পারিবারিক কাঠামো ও সন্তানের সুশিক্ষার প্রতি বিচক্ষণ হওয়া একান্ত জরুরি। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে অবশ্যই নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে সন্তানের সামগ্রিক চিন্তাধারার সাথে ওতপ্রতভাবে নিজেকে জড়িত রাখা প্রয়োজন। কালের আবর্তে শিক্ষা এখন সূদুর প্রসারী।তথ্য-প্রযুক্তির বদৌলতে নানামুখী শিক্ষা আজ দুর্গমতাকেও অতিক্রম করেছে।তাই শেখা,জানা এবং প্রগতিশীল হওয়ার আকাংখা আমাদের অন্তরে লালন করতে হবে।

একজন কিশোর-কিশোরীর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়,তার উপর পরিবেশের প্রভাব, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক পরিবেশ ইত্যাদির নেতিবাচক প্রভাব সাধারণত ধীরে ধীরে তাকে অপরাধের দিকে নিয়ে যায়।একটা সময় সে নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়।তাই এসব বিষয়ে শিশু থেকেই একে অপরের মাঝে  ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমি একটি পরিবারে দেখেছি যে, বাবা এবং ছেলের মাঝে খুব কম কথা হয়।এক সাথে কখনো তারা খেতেও বসে না। যদিও কথা হয় সেটা বাবা এবং ছেলের মধ্যে যে সম্পর্কের হওয়া উচিৎ তেমন নয়। অনেকটা কর্কশ, শ্রদ্ধা -স্নেহহীন ভাষায়।

গ্রামে বড় হওয়ার সুবাদে বরাবরই যেটা লক্ষ্য করেছি যে, যে পরিবারটি ঝামেলাহীনভাবে সদস্যদের মাঝে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা, স্নেহ, আদর,ভালবাসা সর্বোপরি অনুশাসনের রীতি বজায় রেখেছে, সেই পরিবারের সদস্যরাই মেধাবী ও কর্মঠ হয়ে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।ফলে, পরিবারটি আলোর মুখ দেখেছে। যদিও অন্যান্য পরিবারগুলো শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মূক্ষীন হয়েছে।কিন্তু আজকের সমাজে এমন কোন পরিবার নেই বললেই চলে, যে পরিবারটি মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। তারপরও অবাক করার মত বিষয় হলো, যখন পত্র -পত্রিকায় দেখা যায় যে ছিন্নমূল পরিবারের চেয়ে প্রতিষ্ঠিত স্থায়ী পরিবারের সন্তানেরা অপরাধের সাথে জড়িত। এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিলাসিতা,অত্যাভিলাষী,অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, অনুকরণ প্রিয়তা,সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব, সামাজিক বৈষম্যতা,নিয়ন্ত্রণহীনতা ইত্যাদি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে।

সুখই জীবনের শেষ নয়,চরিত্রই জীবনের শেষ ‘ কথাটি অনেকেই স্বীকার করলেও কেউ কেউ তার অন্তরালের সত্তার কাছে হার মেনে স্থায়ী অথবা অস্থায়ী সুখের নেশায় প্রত্যাশিত চাওয়া পূরণে মত্ত রয়েছে অবিরত। যে চাওয়ায় নির্লজ্জ ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে হলেও সুখ প্রাপ্তিই একমাত্র কাম্য। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের লোভ বেশি। এ কথা নতুন নয়। আর সেটা যদি হয় সুখের কোন বস্তু বা অনুভূতি, তাহলে তো কারো কাছে লোভের সীমানা প্রাচীর ভেঙে হলেও তা প্রয়োজন। অথচ লোভ মানুষকে কেবল ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দেয় না, মৃত্যুর মত কঠিন সত্যের মুখোমুখিতেও দাঁড় করায়,এ কথাও সত্য। যা প্রতিনিয়তই প্রমাণিত হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লোভ যখন অতিমাত্রায় তাড়িত করছে তখনই মানুষ সত্যের কাঠগড়ায় লোভী চেহারা নিয়ে অসহায়ের মত বাঁচার আকুতি করছে। অর্থাৎ বিচারের মঞ্চেও মিথ্যে অভিনয় করছে। সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ধর্ষণ আইনের সংশোধন করা হয়েছে। যে আইনকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।কিন্তু তারপরও যখন ধর্ষণ,বিকৃত ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় চোখে পড়ে তখন মনে হয় মৃত্যুর ভয়ের চেয়ে নিষিদ্ধ সুখের আনন্দের সাহস অনেক বেশি।এ সাহস এক দিনের অর্জন নয়। তিলে তিলে মিথ্যে সুখের অনুভূতি ও অনৈতিকতার শিক্ষা এ সাহসের জন্ম দিয়েছে।কাজেই কোন শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণতা দান করে আর কোন শিক্ষা সন্তানের ভবিষ্যতকে মৃত্যু মূখে পতিত করে তা একজন অভিভাবক হিসেবে জানাটা যেমন অপরিহার্য তেমনি সন্তানের চেতনায় তা প্রতিষ্ঠিত করাটাও অপরিহার্য। কিছু কিছু নেতিবাচক ধারণা সন্তানের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনে।আইনের চোখে অপরাধী হলে জীবন অভিশপ্ত হয়ে পুরো পরিবারটি ধ্বংসের মূখে পতিত হয়,সমাজের চোখে ঘৃণিত, লজ্জিত ও মর্যাদাহীন হয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকতে হয় ইত্যাদি ধারণাও সন্তানকে দেওয়া উচিৎ।তথ্য প্রযুক্তির যুগে জীবন ব্যবস্থা যেমন সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে তেমনি এর নেতিবাচক ব্যবহারের ফলে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে, কিছু মানুষ সামাজিক অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে বিশ্বমানচিত্রে  দেশ ও জাতির মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করছে। তাই সন্তানের সুশিক্ষায় অভিভাবকের নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ একান্ত জরুরি। সাধারণত পারিবারিক জীবনে সন্তানকে ঘিরেই মানুষের অন্তর্নিহিত স্বপ্ন লালিত হয়। তাই প্রতিটি বাবা-মা ই তার সন্তানকে খুব বেশি ভালবাসে। সেটা হোক ছেলে কিংবা মেয়ে। সন্তানের প্রতি এ ভালবাসা সব জাতি,গোষ্ঠী তথা প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। এটি চিরন্তন জৈবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু তাই বলে সন্তানকে এমন ভালবাসা দেওয়া উচিৎ নয় যে, যে ভালবাসা তার সামাজিক অপরাধ কর্মকান্ডে অনুপ্রেরণা যোগায়,পরিশেষে  জীবনকে আইনের হাতে তুলে দিতে হয়।সন্তানের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে না পারলে একটা সময় সে বিপদগামী পথে পা বাড়াতে পারে। যার পরিণামে পুরো সংসারেই বিশৃঙ্খলা সহ কালো অন্ধকার নেমে আসতে পারে। তাই ছোট থেকেই সন্তানের ভাললাগা,পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া অভিভাবকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্বে উদাসীনতা প্রদর্শন করা মানেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে তরুণ প্রজন্মের বেড়ে উঠা, একটা সময় নিয়ন্ত্রণহীন ছুটে চলায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া।

পারিবারিক সুশৃঙ্খলতা ও সুনিয়ন্ত্রণ বজায় না থাকলে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব সন্তানের সাইকোপ্যাথ ব্রেন তৈরিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর গবেষণা থেকে পাওয়া যায় যে, সাইকোপ্যাথ ব্রেন যাদের ক্ষেত্রে কাজ করে তাদের নিউরনগুলো বিশেষ ধরণের আবেগ বা অনুভূতিতে সাড়া  দেয় না।ফলে,খুন বা ধর্ষণের মত বড়মাপের অপরাধ যেসব অপরাধীরা করে, তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং ( FMRI) পরীক্ষায় দেখা গেছে যে,তাদের মস্তিষ্কে রয়েছে ত্রুটি সম্পন্ন সংযোগ ব্যবস্থা।

যার ফলে,এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াটা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে। কারণ,বিশেষ সময়ে তাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো আবেগ বা মায়া-মমতার কেন্দ্রে সংযুক্ত হতে পারে না।

পারিবারিক শিক্ষাই একটি সন্তানের প্রাথমিক নৈতিকতার ভিত্তি তৈরি করে।এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে সে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। কাজেই, আচরণের কাংখিত স্থায়ী পরিবর্তন সৃষ্টিতে পরিবারের মূখ্য ভূমিকাই সন্তানের নৈতিক চরিত্র গঠনে প্রধান শিক্ষালয় হিসেবে অবদান রাখে। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানকে প্রকৃত মানুষ করণের নিমিত্তে দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা প্রয়োগের মাধ্যমে যত্নবান হওয়াটা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। একটি আদর্শ ও নীতিবান  সন্তান শুধু পরিবারেরই সম্পদ নয়,দেশ ও জাতির সম্পত্তিও বটে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর