সোহেল হোসেন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ গেল মৌসুমে আমন ধানে ভাল দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ফের আমন ধানে স্বপ্ন দেখছে লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা। এবারও কৃষকরা জমিতে আমন ধান বপন করে বেশী লাভের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন।ব্যাস্ত সময় পার করছেন বপন করা আমন ধানের জমি পরিচর্যায়। এখন কেবল দেখার পালা কৃষকের স্বপ্নের আমনে কত বেশী সোনা ফলে।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে ৮১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন।এ পরিসংখ্যান গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম। তা সত্বেও কৃষকের স্বপ্ন কম নয় মোটেও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গেল মৌসুমে জেলাতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন।লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি.আর ১১, ২২, ২৩, ব্রি ৩০, ৩২, ৩৩, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৬, ৪৯, হরি, স্বর্ণা, বিনা, কালাজিরা, গিগজ জাতের ধান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে সার ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন আমন চাষীরা। তবে এখনও অনেক জমিতে চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
যারা বর্ষার শুরু থেকে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন, তাদের প্রায় জমির ধানগাছ অনেকটা বড় হয়ে গেছে। তারা ধানের জমিতে জমিতে ফসল ভালো ফলনের জন্য ইউরিয়া সার ছিটাচ্ছেন।
আবার প্রায় জমিতে পোকামাকড় মারতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ গাছগুলো আর সেই তার সাথে দুলছে যেন আমন চাষিদের স্বপ্ন। বপনের পর থেকে ৩ মাস ১০ দিনের মাথায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসল কাটা-মাড়াই করে ঘরে তুলবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।
সদর উপজেলার চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক মোঃসফিক উল্যা জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ৫০ মনের অধিক ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ তার।
একই এলাকার কৃষক মোঃশাহ আলম বলেন, তিনি প্রায় দেড় একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। জমিতে সার এবং ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। তার জমিতেও অধিক ধান উৎপাদনের প্রত্যাশা করেন তিনি।
অন্যদিকে, মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকা রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদরের চররমনী মোহন এলাকায় জোয়ারের পানির তোড়ে কয়েক হাজার একর জমির ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে হতভাগ্য কয়েক কৃষকের স্বপ্ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। যদিও স্থানীয় কৃষি বিভাগ এটাকে তেমন একটা ক্ষতি হিসেবে দেখছেনা।
চররমনী মোহন ইউনিয়নের মাতবরহাট এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন বলেন, তার এলাকার বেড়িবাঁধের পাশ্চিম পাশে থাকা নদীর তীরবর্তী কয়েক একর জমির রোপা আমন নষ্ট হয়ে গেছে। মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে ধানের চারা বিনষ্ট হয়েছে এবং ক্ষেতে নোনা পানি জমে থাকার কারণে ধানের চারা পঁচে গেছে।তবে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের বিভিন্ন প্রনোদনা দেওয়ার কথা জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলাতে দুই লাখ ৬৩ হাজার ৬শ জন ধান চাষী রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র দুই হাজার ৮শ জন কৃষককে সরকারীভাবে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আড়াই হাজার জনকে ৫ কেজি করে উফসী ধানের বীজ, ড্যাপ সার ১০ কেজি ও এমওপি সার ১০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। আর বাকী তিনশ জনকে দুই কেজি করে হাইব্রিড জাতের ধান বীজ ও ২০ কেজি ড্যাপ সার এবং ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে।