সোহেল হোসেন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন দাসেরহাট বাজারে ব্যক্তি মালিকানাধীন দ্বিতল ভবনের ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন খোঁড়াখুঁড়িকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন দুইপক্ষ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় দাঙ্গা হাঙ্গামার আশঙ্কা করছেন বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করার দুই মাসেও কাজ শেষ না হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায়,দাসেরহাট বাজারের ব্যাংক রোডে একটি দ্বিতল ভবনের মালিক কাজল ও নুর হোসেন বাবুল নামে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি সম্প্রতি তাদের ভবনের সেফটিক ট্যাংকি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত ময়লা পানি অপসারণের জন্য বাজারের সওজ বিভাগের মালিকানাধীন রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করে,এরপর ওই ড্রেনের ভেতর দিয়ে আরেকটি পাইপ লাইন বসাতে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এই পাইপ লাইনটি স্থানীয় রূপাচরা সফিউল্যা উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে পাশ্ববর্তী খালে ময়লা ফেলার জন্য ড্রেন নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ এ ড্রেনে আগ থেকে আরো ২১/২২টি সংযোগ থাকলেও তখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধা না দেওয়ায় এলাকায় এখনকার কর্মকান্ড নিয়ে তাদের বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।
অপরদিকে সড়ক বিভাগের অনুমতি না নিয়ে রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করায় সড়কের পাশে অবস্থিত পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে। এতে ওই খুঁটি থেকে সংযোগকৃত তিনটি মিটার ভেঙে যায়। পরে ওই ভবনের মালিক ক্ষতিপূরণ দিলে পুনরায় লাইন মেরামত করে সংযোগ চালু করেন পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চন্দ্রগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) কাজী মোহাম্মদ মহসীন বলেন,সড়কের পাশে ড্রেন খোঁড়ার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়েছিল। পরে ভবন মালিকের পক্ষথেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ জমা দিলে ঠিকাদারের লোকজন লাইনটি মেরামত সম্পন্ন করে।
স্থানীয় রূপাচরা সফিউল্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের সেফটিক ট্যাংকির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ড্রেন নির্মাণ এবং সেই ড্রেনের ভেতরে পাইপ বসিয়ে ময়লা বিদ্যালয় সংলগ্ন খালে ফেলা হলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হবে। বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে আমি এমন কাজ করতে দিতে পারি না। তাই বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম ও চন্দ্রগঞ্জ থানায় অবহিত করেছি। এরপর প্রশাসন কাজটি বন্ধ করে দেয়। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন,গত ১১ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক একটি জুম মিটিংয়ের কারণে আমি ওই বৈঠকে যেতে পারিনি।
নুর হোসেন বাবুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ,তার কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গদের কয়েকজন ব্যাক্তিগ আক্রোশ অবৈধ ও ব্যাক্তিগত সুবিধা না পেয়ে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র ও হয়রানি করে আসছে। অথচ এ ড্রেনে বিদ্যালয়েরই নিজস্ব ময়লা অপসারনের পাইপ সংযুক্ত লাইন সহ আরো ২১/২২ টি সংযোগ লাইন রয়েছে। কেবল তার লাইনটি কেবল ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।তবে ভবনের মালিক নুর হোসেন বাবুল বলেন,সেফটিক ট্যাংকি পুরে যাওয়ার কারণে আমরা নিজস্ব খরচে বাজার বণিক সমিতির অনুমতি নিয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করি। কিন্তু রূপাচরা সফি উল্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করে কাজটি বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি আমাদের লাখ টাকা ব্যয় করে বসানো পিভিসি পাইপ লোকজন দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন তিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে,কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি।
স্থানীয় চরশাহী ইউপি চেয়ারম্যান ও দাসেরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলজার মোহাম্মদ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো মাহবুবুর রহমান নিজের কর্তৃত্ব বহির্ভুতভাবে ড্রেন নির্মাণের কাজটি বন্ধ করেছেন। এটি তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। কারণ,ড্রেনটি বাজারের সুবিধার্থে করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই ড্রেনটি বিদ্যালয়ের সীমানার বাইরে। তাহলে,তিনি কীভাবে কাজটি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করলেন?
এ ব্যাপারে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) একে ফজলুল হক জানিয়েছেন,দাসেরহাটে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। তবে বিষয়টি মিমাংসার জন্য এখনো কোনো বৈঠক হয়নি।তিনি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।