দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার আশঙ্খাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা করোনা সংক্রমন প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ দিনের কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হলেও নিষেধাজ্ঞা মানছেননা অনেকেই।
বৃহস্পতিবার (২৪জুন) বিকেল সাড়ে ৫ টায় উপজেলা সভাকক্ষে অয়োজিত উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভায় গতকাল শুক্রবার ২৫ জুন সকাল ৮টা থেকে ৪ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত ১০ দিনের এই কঠোর বিধি নিষেধ ঘোষনা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন। তার স্বাক্ষরিত এক গণবিঙ্গপ্তিতে এই বিধি নিষেধ ঘোষনা করা হয়েছে।
গণবিঙ্গপ্তিতে বলা হয়েছে জরুরী সেবার বাইরে মার্কেট,রেষ্টুরেট,সেলুন,বিউটি পার্লার,চায়ের দোকানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য দোকান পাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজারে নিত্য প্রয়োজনিয় পণ্যের দোকান পাট (মুদি দোকান) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিধি নিষেধ মেনে খোলা থাকবে। এসময় প্রয়োজন ব্যাতিত কেউ এসব স্থানে যেতে ও ঘোরা ফেরা করতে পারবে না।
এতে আরো বলা হয়েছে বিধিনিষেধ চলাকালিন কোনো প্রকার যানবাহন ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। উপজেলার ভিতর সকল প্রকার পরিবহন /গণপরিবহন রিক্সা,ভ্যান অটো রিক্সা, মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, বাস ও মাইক্রো বাস,ইত্যাদী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র,কমিনিটি সেন্টার, সিনেমা হল ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
এছাড়াও গণ জামায়েত হয় এই রুপ সামাজিক, রাজনৈতিক,ধর্মিয়,অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। সন্ধা ৭টা হতে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরী প্রয়োজন যেমন ঔষধ ক্রয়,চিকিৎসা সেবা গ্রহন,মৃত দেহ দাফন,/সৎকার ব্যাতিত বাড়ীর বাইরে যাওয়া যাবেনা।
এদিকে সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার পৌর শহর ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকে প্রশাসন কঠোর নজর দারী দিয়ে বিধি নিষেধ পর্যবেক্ষণ করছেন। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে টহল জারি রয়েছে।
অপরদিকে প্রশাসনের দেয়া এসব বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে অনেককেই মোড়ে মোড়ে আড্ডা করতে দেখা গেছে,অনেকেই আবার গোপনে সুযোগ বুঝে দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে,কিছু কিছু হোটেলের ভেতরে গাদাগাদি করে লোকজন বসিয়ে খাওয়াতে দেখা গেছে। কাচাঁ বাজারে এবং মাছ বাজারে স্বাস্থ্য বিধি খুব একটা মানছেনা মানুষ। মটর সাইকেল,ভ্যান, রিস্কাসহ অন্যান্য যান চলাচল করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও প্রয়োজন ব্যাতিত নানা অযুহাতে অনেককেই বাইরে আড্ডাসহ ঘোরা ফেরা করতে দেখা গেছে।
কথা হয় রিক্সা চালক ফিরোজ এর সাথে তিনি বলেন আমরা প্রতিদিন যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালাই,রিক্সা বন্ধ থাকলে খাবো কি? কিস্তি চালাবো কি করে।
হোটেল ব্যাবসায়ী উজ্জল বলেন আগের দিনের যা রান্না করা খাবার ছিলো সেগুলো শেষ করতে অল্প কয়জন লোক বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন,এগুলো শেষ হলে কাল থেকে আর বসিয়ে খাওয়াবেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ মশিউর রহমান বলেন দিন দিন এ উপজেলায় করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৯ জনের, এর মধ্যে ২৪ জন সনাক্ত হয়েছে। মোট সনাক্ত হয়েছে ২৯৪ জন, এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২০১জন,মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের,বর্তমান রোগী ৮৪জন। আক্রান্তের হার শতকরা ৪৫ পারছেন্ট।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার আশঙ্খাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, উপজেলা সংক্রমন প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ দিনের জন্য কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদি কেউ বিধি নিষেধ অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী জরিমানাসহ কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।