মহিপুরের ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের নামে অর্থ বরাদ্ধ করে পারিবারিক গোরস্থান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জনশ্রুতি রয়েছে তিনি ব্যাপক টাকা খরচ করে বিতর্কির্ত নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বার্চিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী আশ্রয়ন প্রকল্প-২ আওতাভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর বিতরণ থেকে শুরু করে জেলেদের নামে বরাদ্ধকৃত চাল, টিআর, কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। এ বিষয়ে দফায় দফায় অভিযোগ উঠলেও উপজেলা প্রশাসনের নিরবতার কারণে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। অজ্ঞাত কারণে উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৯নং ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ জলিল আকন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায় নগদ অর্থের বিপরীতে ১ লক্ষ ৯২ হাজার পাঁচশত ও ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায় নগদ অর্থের বিপরীতে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৫ লক্ষ ৬০ হাজার পাঁচশত টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দু’টি এজেন্ডা দেন। গত ১১ মার্চ পরিষদের সভার মাধ্যমে চাপলী বাজার জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের্ব কবরস্থানের বাউন্ডারী নির্মাণ একটি প্রকল্প দেখানো হয়। সেখানে চেয়ারম্যান আঃ জলিল আকন নিজে সভাপিত হয়ে পঁাচ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে মসজিদের গোরস্থান নির্মাণ না করে নিজের পারিবারিক কবরস্থানের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কমিটিতে চেয়ারম্যান নিজে সভাপতি এবং তার অনুসারী ৩ জনকে সদস্য করা হয়। ওই কমিটিতে নামে মাত্র চাপলী বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোঃ জাকারিয়াকে রাখা হলেও এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানানো হয়নি। অবশ্য এর প্রমাণও পাওয়া গেছে, কমিটির রেজুলেশনের খাতায় সকলের পিতার নাম থাকলেও ইমাম জাকারিয়ার পিতার নাম উল্লেখ নেই। এবিষয়ে ইমাম মো. জাকারিয়া বলেন, ‘প্রকল্পের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমাকে কোন দিন ডাকা হয়নি’।
এ ব্যাপারে মস্জিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আহসান বলেন, চেয়ারম্যান আঃ জলিল আকনকে বলা হয়েছে মস্জিদের পাশের্ব জনসাধারণের জন্য কবরস্থান করা হবে ভালো, তবে তদারকীতে মস্জিদ কমিটির লোক রাখা হউক। কিন্তু সে তা না করে তার খেয়াল খুশি মত সরকারী অর্থের বরাদ্ধের টাকা দিয়ে তার নিজের পারিবারিক গোরস্থান নির্মার্ণের কাজ শুরু করেছে। তিনি এর আগেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এসএম আহসান অভিযোগ করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ আজাহার খলিফা বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে যারাই থাকুকনা কেন মস্জিদ সংশ্লিষ্ট কাজ হলে মস্জিদ কমটির সদস্য তথা মুসুল্লীরা বিষয়টি জানার কথা। সেখানে সভাপতি ছাড়া কোন সদস্যই কিছু জানেন না’।
সরেজমিনে গিয়ে জনা গেছে, ২০১৪ সালে বর্তমান চেয়ারম্যান আঃ জলিল আকন ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তখন স্থানীয় সাংসদ পানী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান তালুকদারের সহযোগিতায় মস্জিদ খালিদ জামিল (চাপলী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মস্জিদ) নির্মাণ কাজের প্রকল্প তৈরী করেন। সেখানেও তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হয়ে সাত সদস্যর একটি কমিটি গঠন করে মস্জিদ উন্নয়নে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সেখানে দেখা যায়, আল ফোরকান ফাউন্ডেশনের ৩৪ লক্ষ ও স্থানীয় অনুদান সহ ৪১ লক্ষ ২২ হাজার পনের টাকা ব্যয় নির্মাণ কাজ করা হয়। যেখানে নামে ভৌতিক ভাউচার তৈরী করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ বিদ্যমান। একটি তুলাগাছ (শিমুল গাছ) বাবদ ৩৫ হাজার তিন’শ চুরাশি টাকা দেখানো হয়েছে অথচ তুলাগাছটি কেনা হয়নি। পাউবো বেড়িবঁাধ থেকে মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে কেটে আনা হয়েছিলো। এভাবে অফিসিয়াল আপ্যায়ন, ষ্টেশনারী সব মালামালের আলাদা আলাদা বিল ভাউচার থাকা সত্ত্বেও বিবিধ ভাউচার তৈরী করে টাকা আত্মসাতের একাধিক প্রমাণ মিলেছে।
কবরস্থান বিষয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আঃ জলিল আকন বলেন, মসজিদের পাশের্ব কবরস্থান করার কথা থাকলেও মস্জিদ কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে তা করা যায়নি। তাই বরাদ্ধকৃত অর্থ উত্তোলন করিনি। এখন আমর নিজের অর্থায়নে পারিবারিক কবরস্থান নির্মাণ করছি।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন কবির বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আমরা জেলায় পাঠিয়েছি এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে কাজ করলে প্রকল্প যেখানে সেখানেই করতে হবে, অন্য কোথাও করলে বিল হবে না। বিশেষ করে প্রকল্প সংশোধন করার প্রয়োজন হলে তাও করা যাবে।