ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বর্তমান বাজারে একটি সোলার স্ট্রিট লাইট (সড়কবাতি) স্থাপনে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল পৌরসভায় একটি স্ট্রিট লাইট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। এনিয়ে বেশ সমালোচনা পৌরসভাজুড়ে। এদিকে স্ট্রিট লাইট স্থাপনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পরিবেশ,বন ও জলাবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের আওতায় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে রাণীশংকৈল পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে ১৫০টি লাইটের দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ।
কাজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় এনার্জিয়ন বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৫০টি স্ট্রিট সোলার লাইট স্থাপনে মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৯ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় ওই কোম্পানিটি।
বাজারের ৩০ হাজার টাকার একটি স্ট্রিট লাইট পৌরসভার বরাদ্দে ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। বাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে ১৫০টি লাইটে প্রায় দেড় কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে এই প্রতিবেদক অনুসন্ধানে নামেন। এই সময় পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী লাইট স্থাপনের এস্টিমেট বা কাজের ধরন সম্পর্কে তথ্য দিতে সময় ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে অপারগতা জানান।
পরে পৌর প্রশাসক ইউএনও রকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথমে তথ্য দিতে অপারগতা জানালেও দুদিন পরে লাইট স্থাপনের ডিজাইনসহ এস্টিমেটের দুটি ছবি প্রতিবেদকে দেন। তবে এলএডি লাইট, সোলার প্যানেলসহ অন্য মালামাল কোনোটার কেমন দাম ধরা হয়েছে সেটির কোন তথ্য প্রকৌশলী বা ইউএনও কেউই দেননি।
পৌর প্রশাসকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোলার স্থাপনে ৩ ফুট মাটি খনন করে ৫ ইঞ্চি সিসি ঢালাই দিয়ে ২ ফুট বাই ২ ফুট আরসিসি বেজ ঢালাই দেওয়ার নিয়ম।কিন্ত সেটি করছেনা ঠিকাদার কিংবা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তারা সিসি ঢালাই বাদ দিয়ে সর্ব্বোচ ১৬ ইঞ্চির একটি স্লাব দিয়ে সোলারের গোড়া বসিয়ে মাটিচাপা দিয়ে ওপরে আবার ১৪ থেকে ১৫ ইঞ্চির খোয়া ঢালাই দিচ্ছে।
১৬৫ ওয়াটের সোলার প্যানেল দেওয়ার বিধান থাকলেও তারা কোথাও ৮৫ ওয়াটের প্যানেল ও নিন্মমানের এলইডি লাইট স্থাপন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুইবছর আগে উপজেলা পরিষদের আওতায় রাণীশংকৈল উপজেলার আঞ্চলিক সড়কের ধারে জাইকার প্রকল্পে শতাধিক সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৪৫ হাজার টাকা।
পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘ভালো লাইট যেখানে ৩০ হাজার টাকায় স্থাপন সম্ভব। সেখানে পৌরসভা এত অতিরিক্ত টাকায় কেন বর্তমানে লাইট স্থাপন করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ তারা বলেন, ‘সরকার বা রাষ্ট্র অযথায় প্রায় কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে।’ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে দেখার আহ্বান জানান তারা।
পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘স্ট্রিট লাইট নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে। যেসব মালামাল স্থাপন হচ্ছে এগুলো নিম্নমানের। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ তা ছাড়া বিভিন্ন সময় লাইটের দাম নিয়েও অনেকে তার কাছে অভিযোগ করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী বলেন, ‘ইতিমধ্যে শতাধিক লাইট স্থাপন হয়েছে। স্ট্রিট লাইটের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যা অনুমোদন দিয়েছে, তা আমরা বাস্তবায়ন করছি। কাজে কোন অনিয়ম হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক (রংপুর) মোস্তফা রায়হান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সোলার লাইট স্থাপনের ব্যয় যাচাই বাছাই করে ধরা হয়েছে। সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও এবং পৌর প্রশাসক রকিবুল হাসান বলেন, সিসি ঢালাই বা অনিয়মের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।
Post Views: 17