দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের দামারমোড় এলাকায় বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টের বিষাক্ত ধেঁায়া, ধুলাবালি ও বিটুমিন পোড়ানোর দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে ঐ এলাকার পথচারীসহ গ্রামবাসীদের।
এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, পথচারী ও এলাকার বাসিন্দারা। পৌর শহরসহ উপজেলার পাশপাশে এমন কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরবেই থেকে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে প্রতিকার করেও দুর্ভোগ না কমায় ফুঁসছে এলাকাবাসী।
অপরদিকে প্লান্টের বিষাক্ত ধেঁায়া, ধুলাবালি ও বিটুমিন পোড়ানোর ধেঁায়া-এ্যাশ পড়ে পাশের জমির ধানের গাছ পুড়ে গেছে। কালো ও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে সবুজ ধানের ক্ষেত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার চিন্তামন থেকে দেশ মা হাট সড়কের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। ওই সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে দামারমোড় বাজারের ৩০০ গজ পূর্ব প্রান্তে ফসলি জমির পাশে। সেখানেই বিটুমিন পোড়ানো ও মিক্সিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। পরে মিক্সিং পাথর ট্রলিতে করে দেশ মা হাটের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই রাস্তার কাজের ঠিকাদার জয়পুরহাটের ইফান এন্টার প্রাইজ বলে জানায় উপজেলা প্রকৌশল অফিস। দিনভর বিটুমিন মিক্সিং প্লাান্টের ধেঁায়া ও ধুলাবালিতে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়া দায়। সেই ধেঁায়া ও ধুলাবালি আশপাশের ফসলি জমিসহ বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উড়ে পড়ছে।
তবে সেইসব মেশিনের ছবি নিতে গেলে সাংবাদিককে পড়তে হয় রোষাণলের মুখে। হঠাৎ করেই ঠিকাদারের কেয়ারটেকার চড়াও হয়ে সাংবাদিককে বলে, ছবি তুললেন ক্যান মেশিনের, ছবি তুলতে অনুমতি নিয়েছেন? এখান থেকে চুপচাপ চলে যান।
উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের দামারমোড় এলাকাবাসী তৌহিদুজ্জামান রাসেল, ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চিন্তামন থেকে দেশমা হাট সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য দামারমোড় বাজারের তিন’শ গজের মধ্যেই দামাড়মোড়-পুখুরী সড়কের ওপর বিটুমিন মিক্সিং প্লান্ট মেশিন বসানোসহ নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণ করতে বিটুমিন পোড়ানোসহ মিস্কিং প্লান্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালু রাখা হয়। তখন প্লান্টের বিষাক্ত ধেঁায়া, পাথরের ধুলাবালি ও বিটুমিন পোড়ানোর গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল তো দুরের কথা বাজারেও ঠিকমতো থাকা যায় না। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে দুর্ভোগে পড়লেও প্রতিবাদ করতে ভয় পায় সবাই। তাই ওই রাস্তার মানুষগুলো বেশি অর্থ ব্যয় করে আটপুখুরহাট দিয়ে ঘুরে জরুরী কাজ সারছেন। উপজেলার পাশপাশে এমন কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরবেই থেকে যায়।
এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার পরিচয় গোপন করে এড়িয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, বিটুমিনের ধেঁায়ায় গন্ধে ও ধুলাবালির কারণে দম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর প্রতিবাদ করলে এলাকায় থাকা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে যাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মোতাহার হোসেন বলেন, ওই নির্মাণকাজের কালো ধেঁায়া ও ধুলাবালিতে আমার জমির ফসল প্রায় কালচে হয়ে এসেছ। সেগুলোতে আর ধানের শীষও গজায়নি। তবে ঠিকাদার আমার জমির নষ্ট হওয়া ফসলের কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সড়ক সম্প্রসারণ কাজ চলছে। ওই ধেঁায়া ও ধুলাবালিতে সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও এলাকার স্বার্থে সবকিছুই মেনে নিতে হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন,ওই রাস্তার ঠিকাদারের নাম্বার আমার কাছে নেই। তবে ওই রাস্তার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আরো অল্প কিছু কাজ করলেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী এফএএম রায়হানুল কবির বলেন, এতোকিছু ভাবলে তো সড়কের কার্পেটিং কাজ বন্ধ রাখতে হবে। আপনি যান হাইওয়ের কাজ চলছে, সেখানে দেখেন কিভাবে কাজ করা হচ্ছে।
ফুলবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, আমার কাছে কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমির সফল নষ্ট হওয়ার কোনপ্রকার লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ আসেনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। এখনি উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলছি।