বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিস্ফোরক,দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়ন পরিষেদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জিএম সুফি নিয়াজি, সাধারণ সম্পাদক হিমুন সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মার্জিনা আক্তার ঝতু, রয়েল বড়ুয়া এবং ওয়ার্ড যুবদলের প্রচার সম্পাদক শ্রী দেবদাস ঘনাসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মাহাবুব হোসেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মাহাবুব হোসেন ভুল্লী থানার দেবীপুর ইউনিয়নের কালেশ্বরগাঁও গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনে ছেলে। তিনি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বলরামপুর বিএম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
মামলার এজাহারে ৮৫জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০জনকে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারা তৎসহ ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৯/৩২৩/ ৩২৫/ ৩২৬/৩০৭/ ৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় আসামি করে মামলাটি করা হয় বলে জানা গেছে।
তবে মামলার বাদীর আইনজীবী কে তা বাদী নিজেই জানেন না। আর কিভাবে এজাহারে ৮৫ জনের নাম এলো তাও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। একমাত্র ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া কাউকেই চেনেন না বাদী।
বাদীর ভাষ্যমতে, অচেনা কয়েকজন সমন্বয়ক পরিচয়ে বাড়ি থেকে ডেকে এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও নাম দেখিয়ে এজাহারে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরবর্তীতে কিভাবে ৮৫ জনের নাম এলো খোদ তিনি নিজেই জানেন না। এমনকি স্থানীয় যুবদলের ওয়ার্ড প্রচার সম্পাদকের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি নিজেই।
বাদী জানান, মামলা করে আমি নিজেই বিপদে পড়েছি। মামলায় ভুল করে অনেকের নাম দেওয়া হয়েছে। পরে আমি তা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু যাদের নামগুলো দিয়েছি, তাদের আমি চিনি না। এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগেরও কোনো ব্যবস্থা নেই আমার। নানা চাপে আছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান বাদী মাহাবুব হোসেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জামিরুল ইসলাম, ওসমান গণি, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সোহান, নিউমুন, শাওন সাব্বির, আশ্রমপাড়ার জ্যোতি, টিকাপাড়ার মো. প্রিন্স, মনিরুল ইসলাম মনির, বাহাদুরপাড়ার বিশাল, পূর্ব গোয়ালপাড়ার সফি আলম, ঘোষপাড়ার মো. সুরকাব, শাহাপাড়ার মো. লিমন, আর্ট গ্যালারি এলাকার ল্যাংড়া সাদ্দাম, মুন্সিপাড়ার ফরহাদ, বরুনাগাঁও এলাকার নাজমুল হুদা, গোয়ালপাড়ার সাব্বির হোসেন হৃদয় টুকু একই এলাকার হোসেন সাদ্দাম, সরকারপাড়ার সৌরভ চন্দ্র রায় , আরিফ হোসেন দানেশ আরিফ, রুহিয়ার অনিক চক্রবর্তী, টিকাপাড়া রুস্তম আলী, মুক্তা, ভুল্লীর হামিদুর রহমান, মকবুল হোসেন মিঠু, বাঙ্গালীপাড়ার আব্দুর রশিদ, জগন্নাথপুরের দাউদ, আসিফ হক আদর, বরুনাগাঁওর আনোয়ার, আশ্রমপাড়ার অমৃত মদক, সরকারপাড়ার সিফাত, কলেজপাড়ার বাবুল, বসিরপাড়ার রিফাত ককটেল, গোয়ালপাড়ার ইসা, গড়েয়ার রায়হান উদ্দিন, রোড এলাকার শাহের আলী, পূর্ব গোয়ালপাড়ার মাহাবুব হোসেন, রাসেল ইসলাম রিসাদ, শিবগঞ্জের মিলন, কলেজপাড়ার সাহেব আলী, ভেলাজান নবীনপাড়ার রমজান আলী, আকচা কাটুপাড়ার শম্ভু বর্মন, গড়েয়ার মাসুদ রানা, যুবলীগনেতা গুলজার হোসেন, বড় বালিয়ার বাহার সরকার, কৃষ্ণপুর এলাকার রুহুল, যুবলীগনেতা আলমগীর, ভুল্লীর ষ্টিফান দাস, ভুল্লী শোল্টহরীর ফজলে করিম মন্টু, বড়বাড়ী গোবিন্দনগরের ফজলুর রহমান, গোবিন্দনগর উত্তর পাড়ার শাহিন, মারুফ আলী শান্ত, আবুল মালেক, পিয়া, আব্দুল, আনিছুর রহমান নেন্দ, গোবিন্দনগর মুন্সিরহাটের আলমগীর, হাজিপাড়ার মশিউর রহমান, রহিমানপুরের রাজু, তানজিমুল, সরকারপাড়ার মমতাজুল (মক্কা), ভুল্লী থানার ইয়ামুল বিএসসি, মিজানুর রহামান, ইয়াসিন আলী, হারুন, রাসেল, বাবুল হোসেন, মাসুদ মেম্বার, মশিয়ার রহমান, যমিনুল ইসলাম মুন, রবিউল ইসলাম রবি, মোশারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, জগদীশ বর্মন, পেয়ার আলী, রেহান রহমান হরিক, মানিক, বেলাল, নুরে আলম, মনোরঞ্জন দেবনাথ মনি ও ময়নুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ৮৫জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ আসামি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাস্থ আর্ট গ্যালারি মোড়ের পাকা রাস্তার উপর বাদী সহ অন্যান্যরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে আসামিরা ধারালো ছুরি, পিস্তল, শর্টগান, ককটেল, বোমা-বারুদ, লোহার রড, চাপাতি, ডেগার, রাম-দা, হকি, চাইনিস কুড়াল, ইট, পাথর সহ মারাত্মক অস্ত্রে-সস্ত্রে সু-সজ্জিত হয়ে ছাত্রদের উপর হামলা চালায়।
এসময় তাদের হাতে থাকা শর্টগান দিয়ে গুলি করতে থাকে। তাদের ছোড়া গুলি বাদীর কপালে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে। প্রকাশ্য দিবালোক বাদীকে হত্যা করার জন্য আসামিরা রামদা দিয়ে একের পর এক কোপ মারতে থাকে এবং এলোপাথারি মারপিট, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, বোমা নিক্ষেপ করে জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাসের সৃষ্টি করেন। এতে অনেকেই আহত হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। গত ৪ঠা আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বাদীসহ অন্যান্যরা। অসুস্থ থাকায় ও সাক্ষীদের কাছ থেকে আসামিদের নাম সংগ্রহ করে এজাহার দায়েরে বিলম্ব হয়েছে।