ভোটাররা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায়। কিন্তু এ নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো কৌতুহল, কথাবার্তা নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোস্টার, মাইকিং, প্রচার-প্রচারণাও তেমন একটা চোখে পড়ার মতো নয়। একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই নিয়মিত সভা-সমাবেশ, শহর ও বড় হাটবাজারে কিছু পোস্টার দেখা যাচ্ছে। মাইকিং শোনা যাচ্ছে একতরফা। ব্যতিক্রম শুধু কুলাউড়া।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। এখানে তার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির মোঃ আনোয়ার হোসেন ও স্বতন্ত্র মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমদ সলমান, পাঁচ বার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন, এবং তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন।
এ আসনে অন্য তিন প্রার্থী হলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার), জাতীয় পার্টির আবদুল মালিক (লাঙ্গল) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মোঃ কামরুজ্জামান (কুলা)।
মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পোদ্যোক্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। নতুন হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় এই আসনে তাকেই এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাসদের আবদুল মোসাব্বির, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির তাপস কুমার ঘোষ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোঃ আবু বকর, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ আবদুর রউফ, জাতীয় পার্টির মোঃ আলতাফুর রহমান ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোঃ ফাহাদ আলম। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনো জমে ওঠেনি।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আবদুস শহীদ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নেই। এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল মোহিত হাসানী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মোঃ আনোয়ার হোসাইন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক জহরলাল দত্ত বলেন, মনে হচ্ছে এটা একটা সাজানো ও একতরফা নির্বাচন। যে পরিবেশ-পরিস্থিতি, তাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ দেখছি না।
মৌলভীবাজার সদর এলাকার সোহাগ মিয়া বলেন, মৌলভীবাজারের তিনটি আসনেই ইলেকশনের কোনো আমেজ নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুললেই দেখা যায় মৌলভীবাজার-২ আসনের নির্বাচন জমে উঠেছে। এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর বিপক্ষে যেভাবে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলছেন। মনে হচ্ছে সেই আসনেই শুধু নির্বাচন হবে। আমার বন্ধুকে নিয়ে সেখানে নির্বাচন দেখতে যাব।
মৌলভীবাজার শহরের চার জন ও শ্রীমঙ্গল শহরের সাত জনের সাথে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়। সবাই প্রায় একই রকমের কথা বলেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার চারটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ এবং নারী ভোটার ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৮ জন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সতর্কতা নির্বাচনী প্রচারণায় পরস্পরের সম্পর্কে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের প্রার্থীদের ডেকে সতর্ক করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ঊর্মি বিনতে সালাম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ডেকে বৈঠক করেন। বৈঠকেও কয়েকজন প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন।
ওই বৈঠকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বৈঠকের উদ্যোগ নেন। আট প্রার্থীকেই মোবাইল ফোনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচ জন উপস্থিত ছিলেন।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ করে নানা বক্তব্য দিয়ে চলেছে। এমনকি এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইঙ্গিত করে বিদ্বেষমূলক নানা মন্তব্য করে পোস্ট দিচ্ছেন ফেসবুকেও।