আনোয়ার হোসেন,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে অবশেষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদের পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিল আওয়ামীলীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে পীরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের কার্যালয়ে পীরগঞ্জ এবং রানীশংকৈল উপজেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এক বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক। সভায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ.লীগের সহসভাপতি সেলিনা জাহান লিটা, পীরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব সহ দুই উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এসময় বক্তব্য দেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব বলেন, আ.লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদকে ছাড় দিয়ে নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি ইমদাদুল হককে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এজন্য আমাদের কিছুটা হলেও মন খারাপ ছিল। আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ জাতীয় পার্টির আবার কেউ কেউ ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় দলের বর্ধিত সভা ডাকা হয়।
সভায় সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, সেলিনা জাহান লিটা সহ পীরগঞ্জ-রানীশংকৈলের বেশির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং প্রধান মন্ত্রীর দিকে লক্ষ্য রেখে দলীয় ভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদের লাঙ্গল মার্কার পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং দলের সকল নেতা-কর্মীদের লাঙ্গল মার্কার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সাবেক এমপি ইমদাদুল হক।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন আওয়ামীগের দখলে থাকলেও ২০০১ সালে হাত ছাড়া হয়। তখন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ আসনটি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহমদের দখলে ছিল। ২০১৪ সালে স্থানীয় আ.লীগের অসহযোগীতার কারণে আসনটি হারায় জাতীয় পার্টি। এটি চলে যায় ওয়ার্কাস পার্টির দখলে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা কারণে এখানে জয় পান বিএনপি’র জাহিদুর রহমান। ২০২২ সালে বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে উপ-নির্বাচনে আসনটি আ.লীগের সহায়তায় আবারো পুনঃরুদ্ধার করেন জাতীয় পাটির্র হাফিজউদ্দীন আহমেদ।
চলতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক এমপি ইমদাদুল হককে। জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদকে। ওয়ার্কাস পার্টি থেকে গোপাল চন্দ্র রায়কে। কিন্তু জোটগত কারণে শেষ মুহুর্তে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আ.লীগের প্রার্থী ইমদাদুল হককে প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী। নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে থাকে যান হাফিজউদ্দীন আহমেদ সহ ওয়ার্কাস পার্টির গোপাল চন্দ্র রায়, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের খলিলুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশা মনি।
আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়ে আ.লীগের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হলেও স্থানীয় আ.লীগের নেতৃবৃন্দ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামেননি। তবে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে জাতীয় পার্টির ও ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন জানান।
আ.লীগের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ পক্ষে নিতে জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টির চেষ্টা চালায়। শেষ পর্যন্ত আ.লীগের বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামীলীগ।
উল্লেখ্য, এ আসনে জয় পরাজয় নির্ভর করে আ.লীগের উপর। আ.লীগ দলগত ভাবে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেয়ায় লাঙ্গলের জন্য জয় লাভ করা এখন অনেকাংশেই সহজ হবে বলে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ভোটার ও সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৮ জন।
Post Views: 138