হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সংরক্ষিত রঘুনন্দন পাহাড়ের পাশে বিভিন্ন শিল্পকারখানা এবং ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও প্লাস্টিকসামগ্রী ফেলার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র্য।
পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বন-সংলগ্ন নির্জন পাহাড়ের পাশে এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেখানে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। জায়গাটি শায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুর উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় কোনো উপজেলা প্রশাসনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার এলাকায় মহাসড়কের পাশে এবং রঘুনন্দন পাহাড়ঘেঁষা এলাকায় বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। এসব শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো ফেলা হচ্ছে সংরক্ষিত রঘুনন্দন বন এলাকায়। রীতিমতো ভাগাড় হয়ে ওঠা ঢাকা-সিলেট রেললাইনের পার্শ্ববর্তী ওই এলাকায় স্থানীয়দের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লা ফেলতে নিষেধ করলেও তাদের কথা আমলে নিচ্ছে না ওইসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু মিয়া জানান, ময়লার কারণে রঘুনন্দন পাহাড়ে জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। কারখানার ময়লা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ফেলা হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হতো না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নীরব। জায়গাটি দুই উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় কেউই দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। এতে করে জনবসতি, সংরক্ষিত বন ও রেললাইনের পাশের গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গায় ময়লা ফেলার কারণে সার্বিকভাবে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে মুক্তির উপায়ও মিলছে না।
সুনির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ না করে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, বড় বড় শিল্পকারখানার লোকজন বনের পাশে ময়লা ফেলছে। তাদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অপ্রত্যাশিত। তাদের উচিত, এসব দূষিত বর্জ্য ফেলার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করা; যাতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়।বাঘাসুরা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, জায়গাটি মাধবপুর এবং শায়েস্তাগঞ্জের মাঝামাঝি। বনের পাশের ওই অংশে ময়লা ফেলা হলেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে ময়লা ফেলা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় বাসিন্দা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাহাড়ি এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পরবে।
হবিগঞ্জ সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে এভাবে ময়লা ফেলা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এসব ময়লা বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিষয়টি কীভাবে সুরাহা করা যায়, বন বিভাগ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সাইফুল্লাহ জানান, রেলপথ ও বনের মধ্যবর্তী স্থানে ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আহসান জানান, বন ও রেলের জায়গার মধ্যে ময়লা ফেলা পরিবেশবিরোধী কাজ। যারা এ ধরনের কাজ করছে জেলা প্রশাসককে অবগত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।