কুয়াকাটায় বিভিন্ন এলাকাজুৃড়ে এবার কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের মাঝে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে । গত কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় এবার মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা। দিনেদিনে বৃদ্ধি পেয়েছে মরিচের চাষাবাদ। এখানকার কৃষকরা ভাগ্য ফেরানোর যুদ্ধে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করছে । তবে ক্ষোভের সুরে তারা জানায়, পর্যাপ্ত পানির অভাবে ভোগান্তীতে পড়েছে তারা। খালগুলো মরে যাওয়া ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তারা গাছে ঠিকমত পানি দিতে পারেনি। এরফলে ফলন কম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে এমনটা জানান এ প্রতিবেদকের কাছে।
দুই সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচ বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় স্বস্থির ছাপ থাকলেও দাম কম পাওয়ায় হতাশায় কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা কাচা মরিচ নিয়ে এলে পাইকাররা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে । কেউ আবার সরাসরি দেশের বিভিন্ন আড়ৎদারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সপ্তাহে ১ দিন বাজার বসে এ দিনে ৫ থেকে ১০টি ট্রাক ভরে কাচা মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। প্রতিটি ট্রাকে ১০টনের মত কাঁচা মরিচ লোড হয় গড়ে ৪০ টনের মত কাঁচা মরিচ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। নীলগঞ্জ, মহিপুর, আলীপুর, লতাচাপলীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ক্ষেত থেকে ক্রয় করে নিচ্ছে কাচা মরিচ।
লতাচাপলি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক দবিরউদ্দিন হাওলাদার বলেন, এবার ৫একর জমিতে মরিচ চাষ করেছে। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২০/২৫ টাকা, ১মন ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়, খরচ পোষানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সার, ঔষধ ও পানিসেচ বাবদ ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ন্যায্যমূল্য পেলে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেনবলে তিনি জানান। থঞ্জুপাড়ার আরেক কৃষক হারিচ তালুকদার বলেন, এখানকার জমিগুলো হচ্ছে বেলে মাটি এ কারনে বিন্দু মরিচের ফলন ভালো হয়েছে।
এছাড়াও কৃষকরা জিরা, বাঁশগাড়াসহ নানা জাতের মরিচের চাষ করছেন। এবার আমি ২একর জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এ পর্যন্ত আমার ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। নয়াপাড়ার কৃষক তপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, ৬ মাস আগে ৪ একর জমিতে মরিচ চাষ শুরু করে। দিন-রাত পরিশ্রম করার পরে ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন সার দেয়া, নিড়ানী দিয়ে ক্ষেত পরিষ্কার রাখা, কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখেছি। পুরো ক্ষেতের মরিচ সঠিক দামে বিক্রি করলে ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি হবে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, এ মরিচ উৎপাদনে এলাকার কৃষকদের পাশাপাশী নারি শ্রমিকসহ নানা মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। মরিচ ক্ষেত থেকে কাচা মরিচ ভেঙ্গে দিলে মনপ্রতি ১০০টাকা আয় করতে পারে ১জন নারী শ্রমিক। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন গড়ে ৪শত টাকা আয় করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তীতে কৃষকরা। সরকারী খাস পুকুর ও খালগুলো সরকার যদি খনন করে দিত তাহলে রবি শষ্যের উৎপাদন ও আগ্রহ বাড়বে এবং আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তারা ।
পাখিমারা বাজারের কাচা মরিচ ব্যবসায়ী মো: রফিক বলেন, কাচা মরিচ বাজারে উঠা শুরু হয়েছে। আমরা পাইকারী ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় স্থানীয়ভাবে ক্রয় করে বরিশাল আড়ৎদারের কাছে পাঠানো হয়।
মহিপুর বন্দরের স্থানীয় আড়ৎদার রাকিব বলেন, লতাচাপলি ইউনিয়নে অনেক মরিচ উৎপাদন হয়, কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়। মরিচের এ বাজার আরো ৩ মাস যাবৎ চলবে। এ রন্দরে স্থানীয় কৃষক ছাড়াও পার্শবর্তী অনেক ইউনিয়ন থেকেও কাচা মরিচ আসে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি-কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, কলাপাড়ায় এবার ৫০০ হেক্টরের বেশি জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি জমিতে গড়ে ৪ টন মরিচ উৎপাদন হয়েছে। এখানে পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাল খনন শুরু হয়েছে। যেখানে খাল নেই সেখানে সরকারী খাস পুকুর কাটার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে, খাস জমি খোঁজা হচ্ছে পুকুর খননের জন্য যেখানে অরশ্যই শুকনা মেীসুমে পানি ধরে রাখা যাবে।