দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করণসহ তিন দফা দাবিতে তিনদিন ধরে খনির ভিতরে ও বাহিরে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন করোনায় লকডাউনে থাকা শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খনির গেটে অবস্থান নিয়েছেন বাইরে থাকা শ্রমিকরাও।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রবিবার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সাথে প্রায় চার ঘন্টা আলোচনায় বসেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার), পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।
খনি শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়, খনির কয়লা উৎপাদন। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের ভেতরে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার খনি শ্রমিকের মধ্যে ৬০৪ জন শ্রমিককে ভেতরে রেখে খনির কয়লা তোলার কাজ শুরু হয়।
শ্রমিকরা জানান, তাদের বিধি-নিষেধ দিয়ে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। খনির ভেতর প্রায় সাত মাস ধরে অবরুদ্ধ শ্রমিকরা গত শুক্রবার (৫ মার্চ) দুপুর থেকে প্রধান গেটে জড়ো হয়ে কর্মসূচি হতে থাকেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম বলেন, দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে শুধুমাত্র কয়লাখনিতেই চলছে লকডাউন। আমাদের দাবি, খনির চলমান লকডাউন প্রত্যাহার করে সকল শ্রমিকদেরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে স স কর্মস্থলে যোগদান করাতে হবে এবং খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করতে হবে, সকল শ্রমিকের প্রোফিট বোনাসসহ বকেয়া বেতন ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করাসহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
উল্লেখিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে তিনদিন ধরে খনির ভিতরে ও বাহিরে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, খনি কতর্ৃপক্ষের সিদ্ধান্ত না জানা পর্যন্ত আমাদের কোন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে না।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নশিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ কনি কতর্ৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রাণলায়ে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসা হয়েছিল। আলোচনা শেষে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও বাহিরের শ্রমিকদের ভিতরে প্রবেশ এবং বেতন ভাতার বিষয়ে চিনা ঠিকাদারকে কর্মপরিকল্পনা করা কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি’র অফিসিয়াল মুঠোফোনে (০১৭১৩ ২০১৬৮৫) একাধিকবার ফোনকল করা হলে তিনি ফোনকলটি গ্রহণ করেন’নি।
এদিকে সকাল থেকেই খনিএলাকায় শ্রমিকদেরকে আন্দোলন করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনিএলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ ডিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হয়েছে।