টেকনাফ থেকে দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো মুসল্লিদের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’র মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কাওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড)-এর মহাসচিব মুফতী আবদুল হালিম বোখারী রাহ.-এর জানাযার নামায। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১জুন ২০২২ইং) রাত দশটায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মাদরাসার পরিচালক, শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আলেম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা জানাযায় অংশ নেন। জানাযার নামাযের ইমামতি করেন মরহুমের সাহেবজাদা মাওলানা রেজাউল করীম বোখারী-এর অনুরোধে জামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস মুফতী হাফেজ আহমদ উল্লাহ (হাফি.)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তিনি চার ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
জানাযা নামাযের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুফতী হাফেজ আহমদ উল্লাহ (হাফি.) মুফতী আব্দুল হালিম বোখারী রহ.-এর বর্নাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মুফতী বোখারী জামিয়ার ১৪ বছর মুহতামিম থাকাকালীন যেমনি জামিয়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তেমনি একাডেমিকভাবেও অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চবোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার অধিনে ‘দাওরায়ে হাদিস’(মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রতিবছর জামিয়ার ছাত্ররা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। চলতি বছরেও (বোর্ডের সর্বোচ্চ সংখ্যা ১৪ জন ছাত্র) মেধাতালিকায় উর্ত্তীণ হয়ে জামিয়ার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে।
অতঃপর তিনি বলেন, আমাদের এ কওমী মাদরাসাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে তদারকি করা হয়। আমাদের শিক্ষাবোর্ড ‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’ প্রাচীনতম একটি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডের একটি লিখিত সংবিধান ও নীতিমালা রয়েছে। ইত্তেহাদের সংবিধানের ধারা নং-২০ এর (গ)-এ উল্লেখ রয়েছে, “মুহতামিম বা নির্বাহী মুহতামিমের দীর্ঘকাল অবর্তমানে নায়েবে মুহতামিম আর নায়েবে মুহতামিম পদ না থাকলে মুঈনে মুহতামিম মুহতামিমের বা নির্বাহী মুহতামিমের দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হবেন”। সে হিসেবে আমাদের জামিয়ার বর্তমান নায়েবে মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ (হাফি.) পরবর্তী শুরার বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করবেন।
অতঃপর জামিয়ার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ (হাফি.) সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের শোকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, অসংখ্য মুসল্লির এই সমাগমে অনেক মেহমানকে যথাযথ আপ্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বড় কষ্ট করে আপনারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আজকের এই উপস্থিতি জামিয়ার প্রতি আপনাদের আন্তরিকতার বর্হিপ্রকাশ। আশা করি আগামীতেও আপনাদের এই আন্তরিকতা বহাল থাকবে। আল্লাহ তাআলা আপনাদের এই কষ্টকে কবুল করুন এবং এর উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন।
অতঃপর মুফতী আব্দুল হালিম বোখারীর বড় ছেলে মাওলানা রেজাউল করিম বোখারী (হাফি.) বলেন, আমার আব্বার এই দীর্ঘ কর্মজীবনে আপনাদের কারো সাথে যদি কোন ধরণের মনমালিন্য হয়ে থাকে, বিশেষত ইত্তেহাদের বিভিন্ন শোরায় আব্বাকেই সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি কারো মনে কোন আঘাত লেগে থাকে, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে আমার আব্বাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন।
নামাযে জানাযা শেষে ‘মাকবারায়ে আযীযী’তে জামিয়ার সাবেক মুহতামিম আল্লামা নূরুল ইসলাম কদীম (রহ.)-এর পার্শ্বে তাঁকে দাফন করা হয়।
তাঁর মৃত্যুতে সত্যিই জামিয়ায় অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে হারিয়ে আজ জামিয়ার সকল ছাত্র ও শিক্ষক-কর্মচারি গভীর শোকাপ্লুত ও মর্মাহত। জামিয়া পটিয়ার সকল ছাত্র-শিক্ষক হযরতের মাগফিরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।
হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে তাঁর খেদমাত কবুল করুন। তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। তাঁর পরিবার পরিজনকে সবরে জমীল দান করুন। জামিয়ার উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা দান করুন, আমীন।