রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৯ অপরাহ্ন

সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখা ও তার স্বামীর অত্যাচারে সর্বশান্তের অভিযোগ। 

সবুজ সরকার,বেলকুচি(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ / ১৮২ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখা ও তার স্বামীর অত্যাচারে সর্বশান্তের অভিযোগ। 


সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখা ও তার সহযোগী স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুনের অত্যাচারে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখা উপজেলার পৌর ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামের মৃত মকবুল ফকিরের মেয়ে এবং রাজাপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুম।

আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়ি রাজপুর হলেও তিনি কাজল রেখার বাড়িতে জাগিড় থাকতেন। তারপর কাজল রেখাকে বিয়ে করে ক্ষিদ্রমাটিয়া তে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। সম্পদ বলতে ৯ শতাংশ জমি ছাড়া তাদের তেমন কোন সম্পদ ছিলো না। তার স্বামী পেশায় একজন ক্ষুদ্র হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবসায়ী। কিন্তু ঔষধ ব্যবসার আড়ালে কাজল রেখা ও আল মামুন এলাকার অসহায় সাধারণ মানুষদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে চড়া সুদে মানুষকে হয়রানী ও সর্বশান্ত করে আসছে। তাদের সুদের জালে জড়িয়ে এ পর্যন্ত ভিটে মাটি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন এলাকার অনেকেই। আবার সুদ আসল সহ টাকা পরিশোধের পরেও সুদ ব্যবসায়ীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকজন ঢাকা পাড়ি জমিয়ে মানবতর জীবন যাপন করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাঁচ-ছয় বছর আগেও উপজেলার ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে কাজল রেখার একটা টিন সেট ঘর ছাড়া অন্য কোনো ঘর ছিলো না। সুদের কারবার করে কাজল রেখা শূন্য থেকে এখন কোটিপতি। সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামের একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাতে নির্মাণ খরচ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে সুদের কারবার করে হঠাৎ করেই তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। তাছাড়াও ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামে আরও ২ দুটি বাড়ি ও অসংখ্য জমিজমাও ক্রয় করেছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, হঠাৎ জরুরি প্রয়োজনে যারা টাকার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েন তাদেরকেই মূলত টার্গেট করেন। অর্থ সংকটে পড়া বিপদগ্রস্ত এসব মানুষজন তাৎক্ষণিক ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর টিপ সই দিয়ে চড়া সুদে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া অনেকের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, জমির দলিলপত্র নিয়েও টাকা দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অঙ্কের সুদ। প্রতি সপ্তাহে মূল ১ হাজার টাকায় সর্বনিম্ন ২০ টাকা হারে সুদ নেয় যা বছর শেষে সেটা শুধু লাভ দাড়ায় ১ হাজার ৪০ টাকা। এই সুদের টাকা দিতে না পারলে তার উপর চলে অত্যাচার আর নির্যাতন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন এলাকাবাসি বলেন, সময় মতো সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে আগেই নিয়ে রাখা ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেকে তিনি তার ইচ্ছামতো টাকা বসিয়ে উকিল নোটিশ পাঠান।

সুদের টাকা নিয়ে নিঃস্ব হওয়া উপজেলার ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে গোলাম মোল্লা বলেন, আমি বিপদে পরে সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখার কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে ছিলাম। সেই টাকা পরিশোধ ও দুই গুন লাভ দিয়েও ঋণের হাত থেকে রেহাই পাইনি। পরে সুদ শোধ করতে আমার ভাই জামিন নিয়ে আরো ১০ হাজার টাকা দিয়ে পরিশোধ করে।

ক্ষিদ্রমাটিয়া উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত বক্কার শেখের ছেলে চাঁন শেখ বলেন, ২ বছর আগে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ছিলাম। আসলসহ ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও বাড়ির জায়গাটুকু জোর করে লিখে নেই। ভিটে মাটি হাড়িয়ে এখন ঢাকায় থাকি।

ক্ষিদ্রমাটিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের তারা বানু জানান, এলাকার সুদখোর কাজল রেখার কাছ থেকে হাজারে ২০ টাকা লাভে সুদ নেই। চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ দিতে দিতে ভিটে মাটি হারানোর উপক্রম হচ্ছে।

এ বিষয়ে সহযোগী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সুদের সাথে তিনি জড়িত না। তবে তার স্ত্রী কাজল রেখা বেশ কিছু দিন আগে সমিতির সাথে জড়িত ছিলো।

এ বিষয়ে সুদ ব্যবসায়ী কাজল রেখার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুদ ব্যবসায়ী বিষয়টা সমিতির উপর দিয়ে গড়িয়ে দেন।

এ বিষয়ে বেলকুচি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, কাজল রেখা ও তার স্বামী যে সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত এটা আমি অবগত। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অভিযোগ পেলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনিসুর রহমান জানান, সুদের ব্যবসা করার কোন ধরনের সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর