বাঁশখালীর ৩২ জেলে, ভারতে আটক, সাড়ে ৩ মাসেও মুক্তি মেলেনি।
জীবন-জীবিকার তাগিদে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সাড়ে তিন মাসেও বাড়ি ফেরেননি চট্টগ্রাম (১৬) বাঁশখালী উপজেলার আওতাধীন শিলকূপ ইউনিয়নের ৩২ জন জেলে। এ নিয়ে শিলকূপের জেলে পল্লীতে উদ্বেগের শেষ নেই। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাঁশখালী উপজেলার ৩২ জেলে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হয়েছেন। ফেরার অপেক্ষায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে পরিবারগুলো। তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাড়ে তিন মাসেও না ফেরায় চরম অর্থাভাবে কষ্টে দিন কাটছে স্বজনদের।
তবে নিখোঁজ জেলেরা সাগরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়ে দেশটির কারাগারে বন্দি আছেন বলে চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন ট্রলার মালিক নুরুল আবছার।
ভারতের কারাগারে আটককৃত জেলেরা হলেন শিলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রামের ওমর মিয়ার ছেলে শাহ আলম, ওমর কাজীর ছেলে ছাবের, আলী আকবরের ছেলে সৈয়দুল আলম, ওমর কাজীর ছেলে হাবিবুর রহমান, মোস্ত্মফা আলীর ছেলে কামাল হোসেন, হাবিব উল্লাহর ছেলে জিয়াউর রহমান, কামাল উদ্দীনের ছেলে দিদারুল আলম ও জয়নাল আবেদিন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে নুর হোসেন ও আজগর হোসেন, সিকান্দার আলীর ছেলে আলী আহমদ, মোস্ত্মফা আলীর ছেলে জাফর আহমদ, মো. ইউসুফের ছেলে আকতার হোসেন, হানিফের ছেলে কবির হোসেন, হাসান আলীর ছেলে আবুল হোসেন, আহছান আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম, ওমর কাজীর ছেলে জয়নাল উদ্দীন, আবুল কাশেমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম, আবুল কাশেমের ছেলে ওবাইদুল হক, আলী আহমদের ছেলে মো. আবদুল্লাহ, হারুনুর রশিদের ছেলে শামসুল আলম, নবী হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, শাহ আলমের ছেলে মো. ফারুক, আবদুল আজিজের ছেলে মো. জোনাইদ, লাল মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, নুরুচ্ছফার ছেলে আহমদ নুর, সৈয়দ নুরের ছেলে আরিফ উল্লাহ, আবদুস সালামের ছেলে হোসেন আহমদ, মোস্ত্মফা আলীর ছেলে নুরুল আলম, নজির আহমদের ছেলে জসীম উদ্দীন এবং আমির আমজার ছেলে মো. ইয়াছিন।
ভারতের কারাগারে থাকা জেলে মুহাম্মদ ইয়াছিনের পিতা আমির হামজা বলেন, ্তুআমরা খুব আর্থিক কষ্টের মধ্যে আছি। আমার ছেলের উপার্জনে আমাদের পুরো পরিবার চলতো। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা কিছু খাদ্যসামগ্রী পেয়েছিলাম। এগুলো দিয়ে কয়েকদিন চলেছিল। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ২ থেকে ৩ বার খাদ্য সহায়তা পেয়েছি। এখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি।
ফিশিং বোট মালিক নুরুল আবছার চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ্তুগত ৮ ফেব্রুয়ারি তারা সাগরে যায়। এর মধ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাগরে ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে। তখন ট্রলারসহ তাদের আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হই। এ বিষয়ে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ৩২ জেলে বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ নামখানা কারাগারে বন্দি আছেন বলে শুনেছি। তাদের মুক্তির জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
শিলকূপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ্তুবাঁশখালীর ৩২ জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন। তাদের একমাত্র পেশা মাছ ধরা। তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত্ম খারাপ। যারা আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
তিনি জেলেদের মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষট্রমনত্রণালয়ের সারবিক সহযোগিতা কামনা করেন।
শিলকূপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মু. নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ্তুভারতে আটক জেলেদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ভারতের আদালতে মামলা চলছে। মামলা পরিচালনার সব অর্থ ট্রলার মালিক বহন করছে। ভারতীয় দূতাবাসেও জেলেদের মুক্তির বিষয়ে সহায়তা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমাদের একজন প্রতিনিধি আবুল বাশার ভারতীয় আদালতে আটক জেলেদের মুক্তির জন্য সারবক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরতে পারবেন জেলেরা।্থ
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ্তুবাঁশখালীর ৩২ জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত ভারতে জলসীমায় ঢুকে যায়। এরপর তাদেরকে সে দেশের কোস্টগার্ড আটক করে নিয়ে যায়। এমন তথ্য দিয়ে ট্রলার মালিক নুরুল আবছার থানায় একটি জিডি করেছিলেন। এ জিডি মূলে তারা উপজেলা নিরবাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেছিল বলে শুনেছি। তবে বর্তমান কী অবস্থা তা আমার জানা নেই।
উপজেলা নিরবাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ্তুঘটনার পর পরই স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় ভারতে আটক ৩২ জেলেদের তালিকা করা হয়েছিল। তালিকাটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটক জেলেদের পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। খুব শিগগির তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।’
জেলেদের মুক্তির জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি হয়ে ভারতীয় আদালতে কাজ করেন আবুল বাশার। ভারত থেকে তিনি মুঠোফোনে চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ‘চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত্ম ভারতের আদালত ছুটিজনিত কারণে ১০দিন বন্ধ আছে। বন্দী জেলেদের মুক্তির জন্য ভারতীয় আদালতে আবেদন জানিয়েছি। কোর্ট খোলার পর বন্দী জেলেদের মুক্তির বিষয়টি জানতে পারবো। এখন পর্যন্ত্ম রায় না পাওয়ায় কিছুই বলা যাচ্ছে না।