তানোরে পটাশ সারের হাহাকার বাড়তি দাম দিলেই মিলছে সার।
রাজশাহীর তানোরে পটাশ সারের জন্য কৃষকদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার বাড়তি দাম দিলেই মিলছে সার বলেও একাধিক চাষিরা নিশ্চিত করেন। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের দোহায়ে কারসাজি শুরু করেছেন বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ডিলাররা। ফলে আলুর জমি রোপন করে পটাশ সার পাচ্ছে না চাষিরা।
সার নিয়ে মহা কারসাজির জন্য কৃষি দপ্তরকেই দায়ী করে নিয়োমিত মনিটরিং করার জোরালো আহবান জানিয়ে ব্যবস্হা নেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রান্তিক চাষিরা। আলু উত্তোলনের আগ মুহুর্তে উপজেলায় আসেন মাননীয় কৃষি মন্ত্রী। সেখানেও কৃষকরা সার সংকটের কথা জানান।কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসার ও এগ্রি কনসার্ন নামের কোম্পানির মালিক শেখ আব্দুল কাদের স্হানীয় কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করেন বলে মন্ত্রী কে অবহিত করেন। মাননীয় মন্ত্রী ও ওই দুই ব্যক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চাষিরা কৃষি অফিসারের কথাই চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আজেবাজে কমেন্ট করেন। এতকিছুর পরও বন্ধ হয়নি সার নিয়ে ভেলকিবাজির খেল।
এদিকে জেলার মোহনপুর উপজেলারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেও একই নিয়মে চলছে মহা সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, আলু রোপনের সময় থেকে চলছে সার সঙ্কটের মহা কাহিনি। প্রকাশ্যে সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে বিক্রি করলেও জেনেও অজানা কৃষি দপ্তর। কখনো ডিএপি, আবার ইউরিয়া, এখন পটাশ সারের হাহাকার পড়েছে।পটাশ সারের সঙ্কট চলছে দীর্ঘদিন থেকে।তারপরও ঘুম ভাঙ্গছে না কর্তৃপক্ষের। যদি সার সঙ্কট হয় তাহলে বাড়তি দাম দিলেই পাওয়া যাচ্ছে কিভাবে। আসলে এসব কিছুই না ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষকের পকেট কাটছে, আর নিজেদের পকেট ভারি করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা মত পটাশ সারের বরাদ্দ নেই।আগের চেয়ে ভাড়া বেড়েছে অনেক। নোয়াপাড়া মোকামে সপ্তাহ ধরে গাড়ীর সিরিয়াল পাওয়া যায়না।আবার টাকা দিলেই মিলে যায় সিরিয়াল। সবকিছুতেই গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম।। আমরা আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে বাড়তি দামে নিয়ে আসা হচ্ছে পটাশ সার। এজন্য বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। কারন দেশের সব জায়গায় এসময় ধান রোপন হয় না।ওই সব এলাকা থেকে পটাশ সার আনতে বস্তা প্রতি খরচ হয় ৯০০/১০০০/১০৫০ টাকা করে। কেউ তো লোকসান করে ব্যবসা করবে না।আবার যে পরিমান চাহিদা দেওয়া হয়, সেই পরিমান পাওয়া যাচ্ছে না। মরার উপর খাড়ার ঘা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া বেলারুশ থেকে আসে সার।
যুদ্ধ না থামলে সার নিয়েও কৃষক দের মাঝে যুদ্ধ শুরু হবে বলেও আশঙ্কা ।কারন এখন বাড়তি দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে সেটাও মিলবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
এক ব্যবসায়ী জানান, কোনভাবে সরকারি মূল্যে সার বিক্রি সম্ভব না। কেউ দিতে পারবে না। কারন দেশের রাঘব বোয়ালরা সারের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মহা সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। সরকার যেন সিন্ডিকেটের কাছে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে। জবাব দিহিতা না থাকলে যা হয় আর কি।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে বসে আছেন।শুধু কি সার প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি। বর্তমানে পটাশ সার বিক্রি হচ্ছে ১০৫০/১১০০ টাকা বস্তা করে। অথচ সরকারি মূল্য ৭৫০ টাকা বস্তা। বস্তায় ৩০০/৩৫০ টাকা বাড়তি দামে কিনছেন কৃষকরা।
অপর দিকে পার্শ্ববর্তী ুউপজেলা মোহনপুরেও পটাশ সারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আলু উত্তোলন করে জমি রোপন করে পটাশ সার পাচ্ছে না ঘাসিগ্রাম ইউপির কৃষক আকতার। তিনি জানান প্রায় সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দোকানে ধরনা দিয়েও পাইনি পটাশ সার। এক প্রকার বাধ্য হয়ে গত বুধবার মোহনপুর উপজেলা কৃষি দপ্তরে যাই। সেখানে গিয়ে সার সঙ্কটের কথা বললেও তারা কর্নপাত করেনি। আমার মত অনেক কৃষক পাচ্ছে না পটাশ সার। এদিকে জমি রোপনের ১২/১৪ দিনের মাথায় পটাশ সার দিতে না পারলে ফলন ভালো হবে না। যদি সার সঙ্কট হয় তাহলে বাড়তি দামে মিলছে কেন এমন প্রশ্ন আকতারসহ প্রান্তিক চাষিদের। প্রায় ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করলেও কৃষি দপ্তর একে বারেই নিরব অবস্থায়।
তানোর পৌর এলাকার কৃষক মোস্তফা জানান আলুর এক বিঘা জমি লীজ নিয়ে রোপন করেছি। কিন্তু বাড়তি দামে সার কিনতে হয়েছে। ন্যায্য মুল্যে পাওয়া যাচ্ছে না।
কামারগাঁ ইউপির বেশকিছু কৃষকরা জানান, সার নিয়ে কারসাজি আলু রোপন থেকে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাস চার মাস থেকে সারের এমন অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষ রহস্য জনক কারনে নিরবে রয়েছে। যারা বলে এই অঞ্চলের কৃষকরা সার প্রচুর ব্যবহার করেন, তারা মাটি পরিক্ষা করে বলুক এই পরিমাণ সার দিতে হবে। আমাদের ইউপিতে এগ্রি কনসার্ন নামের কোম্পানি প্রায় ৯০০ বিঘা জমিতে আলু রোপন করেছিলেন। ওই কোম্পানির ব্যবস্হপনা পরিচালক শেখ আব্দুল কাদের কর্তৃপক্ষের সাফাই গিয়ে বলেছিল এখানকার কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করেন। এই উপজেলার কৃষকের আলু বিঘাপ্রতি নিম্মে ৭০ বস্তা করে ফলন হয়েছে। আর ওই কোম্পানির বিঘাপ্রতি ৪০/৪২ বস্তা করে ফলন হয়েছে।
এটাই পার্থক্য।
সুতরাং কৃষকরা নিয়ম মতই সব কিছু ব্যবহার করে থাকেন। কেন সরকারের দেওয়া সঠিক মূল্যে সার পাবে না কৃষকরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিশের শীত, কিসের বর্ষা, কিসের গরম, সব কিছু কে অপেক্ষা করে দেশকে খাদ্য ভরপুর করেছে।
সচেতন কৃষক রা মনে করেন, একটা দেশ খাদ্যে ভরপুর থেকে চাহিদা মিটাচ্ছেন, যাদের হাতে দেশ, খাদ্যে পথ হারাবে না, বাংলাদেশ। সব কিছুর পরিবর্তন হলেও প্রান্তিক পা ফাটা কৃষক শ্রমিকদের ভাগ্যের হয়নি পরিবর্তন। তা-না হলে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরে দেখতে হচ্ছে কৃষি বান্ধব সরকারের সময় সার নিয়ে এত কারসাজি । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রহমান অনেক ভাষনে পরিস্কার করে বলেছিলেন, আমার দেশের কৃষক শ্রমিকদের সম্মান করতে হবে, মনে রাখতে হবে দেশের মুল চাবিকাঠি কৃষকরা।তাদের ট্যাক্সের টাকায় হয় বেতন।
কিন্তু মহান স্বাধীনতার স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অবিসংবাদিত নেতার কথার প্রতিফলন ঘটেনি। কৃষি মাধ্যম সরকারের সময় সার নিয়ে হত না কারসাজি বা সিন্ডিকেট। প্রয়োগ হয় না সার বিপণন আইন। বিসিআইসির ডিলারদের কাছে সার না থাকলেও বালাই নাশকের লাইসেন্স নিয়ে দেদারসে বিক্রি করছেন সার। প্রতি ইউপিতে একজন করে সাত জন ও দুই পৌর এলাকার জন্য দূ জন। মোট নয় জন রয়েছেন বিসিআইসির ডিলার। কিন্তু এক এলাকায় রয়ে গেছেন তিন জন ডিলার। এক এলাকায় বিক্রি করার জন্য মামলা পর্যন্ত রয়েছে।
সার বিপণন, গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে যাতে পরিচালিত হয় এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, বরেন্দ্র উন্নয়ন বা বিএমডিএ এবং কৃষি দপ্তর। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য মাঠ পর্যায়ে রয়েছে জনবল। তারপরও কেন চলবে সিন্ডিকেট। সার নিয়ে হাহাকার চলবে আর কতকাল।
উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলামের মোবাইলে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি।