লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ের সাক্ষী মাদাম ব্রিজ।
লক্ষ্মীপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ের সাক্ষী মাদাম ব্রিজ স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসের সাক্ষী মাদাম ব্রিজ। যেটিকে ধ্বংস করেছে মুক্তিবাহিনীরা। যার লক্ষ্য ছিল পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ। ফলে পাকহানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করতে না পেরে মাদাম ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকায় করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।
রহমতখালী নদীটি নামে লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তখন এটি ছিল খরস্রোতা নদী। এই নদীর ওপর দিয়ে ব্রিটিশদের তৈরি ব্রিজটি। বর্তমান লক্ষ্মীপুর সার্কিট হাউস সংলগ্ন রায়পুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে এটি।
জানা যায়, ৭১’র এপ্রিলের শেষ দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম লক্ষ্মীপুর প্রবেশ করে। এই সময় মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে মাদাম ব্রিজটি ভেঙে দেয়। পাকহানাদর বাহিনী শহরে প্রবেশ করতে না পেরে মাদাম ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকায় করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।
৭১ সালের মে মাসে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করতে গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেয় মুক্তিবাহিনী। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি পাক হায়েনারা। এর পাশেই পরবর্তীতে তারা তৈরি করে একটি বেইলি ব্রিজ। স্থানীয় আলবদর রাজাকারেরা এতে সহায়তা করে। এদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থান থেকে বহু নারী-পুরুষকে ধরে এনে এই ব্রিজের পাশে হত্যা করে ফেলে দেয়। ব্রিজের পাশে রহমতখালী নদীতে ভাসিয়ে দিত তাদের লাশ। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে এই ব্রিজের নিচে ফেলত পাকবাহিনীরা।
ঐতিহাসিক সেই রহমতখালী খাল, মাদামব্রিজ, বাগানবাড়ি, বাগানবাড়ির কুরুয়ার চর আজও ভয়াল সেই দিনগুলোর সাক্ষ্য বহন করছে।
জানা যায়, ১৯৭১ইং সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় রাজাকার বাহিনীর হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনার নির্মম সাক্ষী হয়ে আছে লক্ষ্মীপুর জেলার মাদাম ব্রিজ। এখনো দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছে চিরচেনা ব্রিজটি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির তোফায়েল বলেন, পাক বাহিনী তাদের গাড়ি বহর নিয়ে এই ব্রিজের সামনে দিয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আমরা মুক্তিবাহিনী মাদাম ব্রিজে মাইন পুঁতে ধ্বংস করে দিয়েছি। যাতে করে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তারপরেও বিভিন্নভাবে তারা শহরে প্রবেশ করেছে স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনী অনেককে হত্যা করেছে ।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল্লাহ জানান, ১৯৭১ইং সালে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনীদেরকে নাস্তানাবুদ করতে বিভিন্নভাবে ছক আঁকে মুক্তিবাহিনীরা। পূর্ব থেকেই তথ্য ছিল পাকিস্তানী বাহিনী এই সড়কে প্রবেশ করবে মূল শহরে। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় মাদাম ব্রিজকে ধ্বংস করা হবে। পরবর্তী সেটি হয়েছে আর পাকিস্তানী বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেই স্মৃতি ধরে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য ধ্বংসস্তূপ ব্রিজ সংরক্ষণ করা দরকার।
ধ্বংসাবশেষ ব্রিজটির দাঁড়িয়ে থাকা শেষ দুই পা সংস্কার করে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে ফুটিয়ে তোলার আবেদন স্থানীয়দের।