কাজিপুরে পল্লী বিদ্যুৎ বদলে দিয়েছে গ্রামীণ জনজীবন।
গ্রামীন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কৃষি ও কুটির শিল্পের বিকাশ,শিল্প কারখানা স্হাপন ও প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
দেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোর মতোই পল্লী বিদ্যুতের সেবা ভোগ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানোন্নয়ন গঠতে শুরু করেছে নদী বিধৌত কাজিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ টি গ্রামের মানুষের আশি হাজার সাধারণ মানুষের ।
গত ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে এ উপজেলার চরগুলোতে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেবার কাজ শুরু হয়।
যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পার করা হয় ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন। কাজিপুর উপজেলার তেকানি ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রুপসা এলাকায় দুটি ১০এমভিএ সাব স্টেশন স্হাপনের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুবিধা ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে ভোগ করতে থাকে গ্রামে বসবাসরত সাধারণ মানুষ। পূর্বে সৌর বিদ্যুত তেমনভাবে জনজীবনের উন্নয়ন সাধন করতে না পারলেও বর্তমান জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সুবিধা।
একসময়ে অবহেলিত এসকল গ্রাম গুলোতে পল্লী বিদ্যুতের সেবা আসার কারণে গড়ে উঠতে শুরু করেছে ছোট ছোট মিল কারখানা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বড় বড় আবাসন।
গ্রামীন অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষিকাজে এখন লাগতে শুরু করেছে পল্লী বিদ্যুতের ছোঁয়া,সূদুর অতীতে সামান্য সেচের জন্য একজন কৃষককে যেখানে হাঁড়ভাঙা খাটুনী খাটতে হতো, সেখানে এক সুইচ চাপলেই পাচ্ছে পানি,ফলে কমে এসেছে ব্যয়।
গ্রামে বসবাসরত ছেলেমেয়েদের পাঠদানে তেমন কোন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবহার ছিলোনা যেখানে,সেখানেই আজ গড়ে উঠতে শুরু করেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অত্যাধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম।
কৃষি ও শিক্ষার পাশাপাশি এসব এলাকায় ইতোমধ্যে বিদ্যুতের সুবিধায় উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গড়ে উঠতে শুরু করেছে অত্যাধুনিক ক্লিনিক ও হাসপাতাল।
অবসরে অলসভাবে বসে সময় কাটানো গৃহিণীরা এখন ভাগ্য বদলাতে ব্যবহার করতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ চালিত সেলাই মেশিন।
এসমস্ত এলাকায় চলাচলকারী যানবহান গুলো একসময় সৌর বিদ্যুতের উপরে নির্ভরশীল থাকার কারণে যাত্রীদের গুনতে হতো বেশী ভাড়া,পল্লী বিদ্যুৎ সেবা পাওয়ার পর থেকে যানবহান চালকদের ব্যয় কমে আসছে শুরু হয়েছে। ফলে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে এখন ফিরে এসেছে স্বস্তি।
পল্লী বিদ্যুতের সুবিধাভোগী কৃষক আবুল মিয়া বলেন,” আগে জমিতে পানি দিতে অনেক টাকা লাগতো,এখন কারেন আসায় সেচ খরচ ম্যালা কমে আসছে, লাভ বেশী হইতাছে”।
গৃহিনী করিমন বানু বলেন, “আগে বাড়িতে মেহমান আসলে আপ্যয়াণ করতে অসুবিধা হইতো, এখন কারেন্টে সহজেই রান্না করতে পারি”।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুরুনাহার বলেন,” সামান্য ঝড় বৃষ্টিতে আগে সৌর বিদ্যুতের আলো পাওয়া যেতো না,এখন পল্লী বিদ্যুতের কারণে কোন সমস্যা হয়না পড়াশোনা করতে। জটিল কোন সমস্যা সমাধানে কম্পিউটাও ব্যবহার করতে পারি সহজেই।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আলমগীর বলেন,” ইতোমধ্যেই জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ২৪ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সক্ষম হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী খুব তাড়াতাড়ি শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেবার কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের দূর্গম গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেবার স্বপ্ন দেখেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,তাঁরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে গ্রামীন জনজীবনে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেবার নির্মিত্তে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সারাদেশে ৪৬১ টি উপজেলায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৮৮টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।