লক্ষ্মীপুরে মরণ ব্যধি ক্যান্সার আক্রান্ত রিকশাওয়ালা দুলাল বাঁচতে চায়।
মুখের বাম পাশে ঠোঁটের ওপরে বাসা বেঁধেছে ভয়াবহ মরণব্যাধি ক্যান্সার। এই রোগের চিকিৎসা থাকলেও অর্থের অভাবে ধীরে-ধীরে অনেক রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা করলে দ্রুত এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। রিকশাচালক মোঃদুলাল হোসেন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সংসারের হাল-ধরতে মানুষের বাসা-বাড়ীতে বর্তামানে কাজ করছেন দুলালের স্ত্রী রৌশন আরা।
রিকশাচালক মোঃ দুলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড আবিরনগর এলাকার বদ্দার বাড়ীর মৃত: শাহ আলমের বড় ছেলে। তাঁর সংসারে রয়েছে ৩ মেয়ে ২ ছেলে। প্রিয়তমা স্ত্রী রৌশন আরা ও বৃদ্ধা মা রফিজা খাতুন। সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ছোট-বেলা থেকে রিকসার প্যাডেলের সাথে সংগ্রাম করে জীবিকা-নির্বাহ করছেন দুলাল।
হঠাৎ গত ১এক বছর পূর্বে তাঁর মুখের বাম অংশে ঠোঁটের ওপরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার। বর্তমান তাঁর জীবিকার চাকা ঘুরাতে হিমশিম খাচ্ছে দুলাল। যন্ত্রনা আর নামমাত্র চিকিৎসার দোলাচলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। বর্তমান কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে। ব্যাথা- যন্ত্রণায় ঘুমও হয়না।খাওয়া-দাওয়া করতেও সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসাও নিতে পারছেন না দুলাল।
ইতিমধ্যে সংসারের হাল ধরতে তার স্ত্রী রৌশন প্রতিবেশীদের বাসা-বাড়ীতে কাজ করছে। জরাজীর্ণ ঘরের ছিদ্র টিন গোলে সোনালী রোদ আসলেও। এই ঘরের বাসিন্দাদের জীবনে ধীরে-ধীরে কেবল অন্ধকার ঘিরে ধরছে।
প্রতিবেশী চা-দোকানী মো. মনির হোসেন বলেন, দুলাল সহজ-সরল। কখনো কারো সাথে দুকথা হয়নি। সবসময় একা চলাচল করতেন দুলাল। মিলেমিশে প্রতিবেশীদের সাথে বসবাস করে আসছেন। জীবনের শেষমুহুর্তে এসে ক্যান্সার আক্রান্ত হবেন। কখনো কল্পনাও করিনি দুলাল। সারাদিন মুখে মাক্স পড়ে চুপচাপ বসে থাকেন। মাঝে-মধ্যে দু’চোখ দিয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। কাউকে কিছুই বলেন না।
দুলালের প্রিয়তমা স্ত্রী রৌশন আরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, চতুর্দিকে অন্ধকার। অভাব আমাদের চিরসঙ্গী। কেউ কোনোরকম সহযোগিতা করছে না। টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারি না জীবন সঙ্গীর (স্বামী’র)। তাই মানুষের বাসা-বাড়ীতে কাজ করে একমুঠো খাবার সংগ্রহ করে (স্বামী ও ছেলে-মেয়ে’র) মুখে তুলে দিই। সর্বশক্তিমান যেকোনো দিন (স্বামী) তাকে নিয়ে যাবেন। সেই পর্যন্ত তাঁর সেবা করে যাবো।
ক্যান্সার আক্রান্ত দুলাল বলেন, সবসময় শুনে এসেছি। মানুষ মানুষের জন্য। এ কথাটি কাগজ-কলম ও শিল্পীদের মুখে। যদি বাস্তবে এমনটাই হয়তো তাহলে একবছরে ওপরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ঘর-বন্দী। কেউতো আমার খবরও নিচ্ছে না। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও হচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাঙা-চোরা ঘরে বসবাস করি। একমুঠো ভাতের জন্য জীবনের শেষ-বেলা স্ত্রী রৌশন-আরা মানুষের বাড়ীতে কাজ করে।
ক্যান্সার আক্রান্ত দুলালের বৃদ্ধা মা রফিজা খাতুন বলেন, চোখের সামনে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বড় ছেলে দুলাল দুঃখ-কষ্টে দিন পার করছে। অভাবী সংসার। টাকার কারণে সুচিকিৎসা নিতে পারছেন না দুলাল। তার থাকার ঘরটি জীর্ণশীর্ণ। বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে। ৩ মেয়ে ২ ছেলে। ধারদেনা করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সকলের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন মা রফিজা খাতুন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সমাজ সেবা অফিসার মোঃ নরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন,যারা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সরকার তাদের সহয়তা দেয়। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে ক্যান্সার রোগীরা ৫০হাজার টাকা পাবে।