রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নে (ইউপি) নৌকা বিরোধী এবং ভুমিগ্রাসী দানেশ ও মোবারক বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছে নৌকার কর্মী বাদির পরিবার। আসামিদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে ভুমিহীন চারজন আহত হয়।
এ ঘটনায় পাকুড়িয়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের পুত্র আতাউর ইসলাম বাদি হয়ে দানেশ ও মোবারকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও প্রায় ৪০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মান্দা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তুু সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি।
এদিকে গত ১৪ জানুয়ারী শুক্রবার ভুমিগ্রাসী দানেশ ও মোবারক বাহিনী ফের ভুমিহীনদের ওপর হামলা করে এতে চারজন গুরুত্বরসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ভুমিহীনদের পক্ষে পাকুড়িয়া গ্রামের একরামুল হকের পুত্র ফারুক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তার পর থেকে বাদী ফারুক ও তার পরিবার এলাকা ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মান্দার ভারশোঁ ইউপির মহানগর মৌজার উথরাইল বিলের জমি জবরদখল এবং আলতাজের মদদে ভুমিগ্রাসী দানেশ ও মোবারক বাহিনীর হামলায় ফারুক হোসেন বাদি হয়ে দানেশ ও মোবারকসহ ২৭ জনকে আসামি করে মান্দা থানায় মামলা করেন। এদিকে মামলা করার পর পরই ভুমিগ্রাসী দানেশ, মোবারক ও এন্তাজ আলী মামলা তুলে নিতে বাদির পরিবারকে নানা ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রাণনাশ এমনকি ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়া হয়।
আসামিদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে বাদি ফারুক ও আতাউর রহমানের পরিবারসহ এলাকা থেকে পালিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের অজ্ঞাত কারণে খুঁজে পাচ্ছেন না পুলিশ বলে অভিযোগ বাদির।
রাস্ট্রিয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, স্খানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের, অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য ভারশোঁ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের ভোট করায় বাদিসহ ভুমিহীনদের ওপর নৌকাবিরোধীদের এমন জুলুম-নির্যাতন। ভারশোঁ ইউপির আমজনতা এবিষয়ে মানীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১নম্বর ভারশোঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মহানগর মৌজার উথরাইল বিলে প্রায় ২০০ বিঘা খাস জমি রয়েছে, কিন্তু জমির শ্রেণী জলকর তাই পত্তন দেওয়া হয় না। শুষ্ক মৌসুমে এসব জমি জেগে উঠলেও বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায়, জেগে উঠা জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল হয়। ফলে বিল পাড়ের ভুমিহীনরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে এসব জমিতে ৬ মাস চাষাবাদ ও ৬ মাস মাছ আহরণ করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে আলতাজ বাহিনীর লোকজন তাদের জমি বলে কোন কথা ছাড়াই দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া,বল্লম,হাতুড়ি, লোহার রড দিয়ে মামলা চালিয়ে মারপিট শুরু করে দেয়। এসময়
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ওইদিনই মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তবে এদের মধ্যে সিরাজ উদ্দিন এবং উজ্জলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী দানেশ ও মোবারক বাহিনীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেম কামনা করেছেন। এবিষয়ে দানেশ ও মোবারক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষরাই তাদের লোকজনকে মারপিট করেছে।
এব্যাপারে মান্দা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফারুকের করা মামলায় ২২ জন আসামি জামিনে রয়েছে, বাঁকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এবিষয়ে ভাঁরশো ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, পাকুড়িয়া গ্রামের বিএনপি ও আওয়ামী লীগবিরোধী কিছু ভুমিগ্রাসী গরীবের ছোট ছোট জমি দখল করেছে,ওরা বেশি লোক তাই ওদের সঙ্গে কেউ পারে না।
তিনি বলেন,এবার নৌকার পক্ষে যারা ছিলো তারা তাদেরকে জমি থেকে তুলে দিয়ে মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে আলতাজ উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার করছে।