আদরের ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। উঠোনে শোয়ানো রয়েছে মেয়ের নিথর মরদেহ। এমন চিত্র দেখে স্বপ্নভরা চোখদুটো মুহুর্তেই শোকে পাথর হয়েছে গেছে। তাই আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ঠোট ফুলিয়ে, বুক ফুপিয়ে ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে দিনমজুর বাবা রফিকুল ইসলাম।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের পেছনে ভাড়া বাড়িতে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে মাইসা আক্তার (১৪)। ছোট মেয়ে।মাইসা মারা যাওয়ার বিষয়টি করেছেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।
বাবা রফিকুর ইসলাম অশ্রুজলে বুকভরা কষ্ট নিয়ে বলছেন, গত সপ্তাহেই আদরের মেয়ে বলেছিল, বাবা আমি পড়ালেখা করতাছি, কয়েকটা ক্লাস পাস দিছি। আর কয়েকটা ক্লাস পাস দিলেই সরকারি চাকরি পামু। তখন তোমারে আর ভোর সকালে উইঠা শীতের ভিতর আলুখেতে কাজে যাইতে লাগবেনা।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল মাইসা। তার মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে গেছেন বাবা। মেয়ের এমন মৃৃত্যু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা তিনি।
রফিকুর ইসলাম আরো বলেন, পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলো আমার মেয়ে মাইসা। চঞ্চলতা ছিল তার ভেতর। কিন্তু গত দুবছর ধরে সে মানসিক ভাবে হতাশায় ভুগছিলো। তাকে অনেক সময় উদাসীন দেখা যেত। কি কারনে এমন করতো বারবার জানার চেষ্টা করেও কিছুই জানতে পারেনি তার পরিবারের কেউই । দিন মজুরের কাজ করে যা রোজগার করেছে তা মাইসার মানসিক চিকিৎসাতে ব্যয় করেছেন তিনি। তারপরেও মেয়ের হতাশা ছাপ একটুও কমাতে পারেননি তিনি। মানুষের করা কালাযাদু ভেবে ওঁঝা ও কবিরাজের কাছেও পরামর্শ নিয়েছেন অনেকবার। তার ধারণা নানীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে খারাপ বাতাস লেগেছে তার মেয়ের।
মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, মাস ছ’য়েক আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো মাইসা। সে সময় ঘরের বাঁশের আড়া ভেঙ্গে পড়েছিলো ফাঁস লাগাতে গিয়ে। এর জন্য মানসিক ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাও চলছিল মাইসার। সোমবার বিকালে আমি ওর চিকিৎসার প্রয়োজনে বাইরে যাই। বাসায় কেউ ছিলোনা। সন্ধ্যা আটটায় খবর পাই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এসময় মেয়েকে মানসিক রোগী বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রতিবেশী ভোট্টু মিয়া বলেন, আমার স্ত্রী জেসমিন আক্তার মাইসাদের বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন আমার স্ত্রী দরজার উপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে দেখতে পায় সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না লাগানো। তারপর কাছে গিয়ে দেখে মাইসা ঝুলছে। দরজা ভেতর থেকে আটকানো। তখন সে চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে যায়। এখনো সে অসুস্থ্য মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা। পরে আমরা মাইসার বাবা ও মাকে খবর দেই এবং পুলিশে খবর দেয়।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।