ছবি তুলে কী হবে? করোনার আগেও কয়েকজন সাংবাদিক এসে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। করোনাকাল পুরোটা চলে গেল, কোনো সহযোগিতা পাইনি। হাট-বাজার সব বন্ধ। কত কষ্টে করোনার সময়টা কেটেছে। তখন কোথায় ছিলেন? এসব ছবি তুলে আমাদের জীবন বদলাবে না।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের রায়পাড়া এলাকায় তৈরি করা বাঁশের পণ্যের ছবি তুলতে গেলে বাঁশমালী দিপ্তী রাণী এসব কথা বলেন। তিনি ওই এলাকার বাঁশমালী গোলাপ রায়ের স্ত্রী।
দিপ্তী রাণী জানান, ওই এলাকার ৫০টি পরিবার বাঁশের তৈরি চাটাই, খাঁচা, কুলা, পাখা, ডালি, ভাঁড়, ঝাড়ু, হাস-মুরগি রাখা খাঁচাসহ নানা পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাকালীন সময়ে লকডাউন হওয়ায় পণ্য তৈরির পর বাজারে বিক্রি করতে পারেনি কেউই। ফলে খুব কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে তাঁদের।
৭০ বছর বয়সী বাঁশমালী নিরলা রানী বলেন, ‘আগে বাঁশের দাম কম ছিল। ৫০০ টাকার বাঁশ কিনে সেই বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করা যেত। কোনো কোনো সময় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই।’
বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করেই ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন গোলাপ রায়। তাঁর স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে সন্তানেরা চাকরি করবে। তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে পাওয়া এই পেশা থেকে তাঁরা আমাদের মুক্তি দেবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাজারে আসার কারণে কমে গেছে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা। অন্যদিকে প্লাস্টিক পণ্যের দাম বাঁশের তৈরি পণ্যের চেয়ে অনেক কম।
ওই এলাকার বাঁশমালী খুদিরাম সাহা বলেন, ‘বাঁশের তৈরি পণ্য ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানা নেই। তাই পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এটা করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিলে এ এলাকার পরিবারগুলো আরও ভালো পণ্য তৈরি করে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি পেশার মানুষকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাঁশমালীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করব।’