আনোয়ার হোসেন আকাশ,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সুব্রত কুমার বর্মণের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চতুর্থ ধাপে ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়ন থেকে নৌকা মার্কায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।
ভোটারদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সুব্রত চলতি মেয়াদে ভোটারদের বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নামে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অনেককে বিভিন্ন রকমের ফাঁদে ফেলেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
আকচা ইউনিয়নের দিনমজুর রমজান আলী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে এই ইউনিয়নের একজন ভূমিহীন বাসিন্দা। যখন জানতে পারলাম আমাদের থাকার ঘর দেয়া হবে, তখন আমি দ্রুতই চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কিন্তু নিরাশ হই। অনেক ধনীদের ঘর দিয়েছে কিন্তু আমাকে দেয় না।
পরে চেয়ারম্যানের সহযোগী সুবেদ আমাকে টাকা দিতে বলেন। ৫০ হাজার টাকা দিলে নাকি ঘর পাওয়া যাবে। আমার একমাত্র সম্বল ছিলো দুইটা ছাগল। আমি সেগুলো বিক্রি করে তাকে ২০ হাজার টাকা দিই। বাকিটা ঘরে ওঠার পর দেওয়ার কথা ছিল। আমাকে দেখে আরও চারজন একই পরিমাণ টাকা দেয়। কিন্তু আমাদের আর ঘর দেয়নি। টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে চাইলেই শুধু বলে কয়দিন পরে আসো।
আকচার সর্দার পাড়ার বাসিন্দা ফেন্সি বেগম বলেন, আমাকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান ২৪ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ঘর দেয়নি। বলতেছে পরের বাজেটে দেবে। কিন্তু মানুষ বলছে নতুন করে ঘর নাকি আর বানানো হবে না। তাই টাকা ফেরত চাচ্ছি, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। আমি এখন শুধু টাকা ফেরত চাই।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সহযোগী সুবেদ জানান, ঘরের জন্য তারাই টাকাটা দিয়েছিল। আমি বলেছি সুযোগ হলেই ঘর দেওয়া হবে।
আকচা ইউনিয়নের বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন জানান, সুব্রত চেয়ারম্যান সরকারি ঘর দেওয়ার নাম করে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এতো পরিমাণ সরকারি ঘর না থাকায় বিপাকে পড়েছেন। সেসময় যেকেউ টাকা নিয়ে গেলেই ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন কিন্তু এখন ঘর দিতে না পারায় সবাই ক্ষেপে গেছে।
সারোয়ার বলেন, শুধু ঘর দেওয়া নয়, আকচা ইউনিয়নের অনেক যুবককে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুব্রত। আমার এলাকার ইসরাফিল নামের এক ছেলের বাবা জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি পাননি সেই যুবক। এখন টাকাও দিচ্ছে না। এমন অনেকের কাছে টাকা নিয়েছেন সুব্রত।
তবে বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রতর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি। পরে মুঠোফোনে সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি এদের কাউকে চিনি না। নির্বাচনে আমাকে ঘায়েল করার জন্য একটি পক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান, টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।