সোহেল হোসেন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুর রামগতি উপজেলা রাতের অন্ধকারে রিকশা চালক মো: মমিনের ঘর আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। শ্বশুর বাসু মাঝির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে মমিনের বাবা আবদুল মতিন। শনিবার (২৭ নভেম্বর) জীবনের নিরাপত্তা ও ঘর পোড়ানোর বিচার চেয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এই দিকে পুড়ে যাওয়া ঘরটি ছাড়া মতিনের থাকার আর কোন ব্যবস্থা নেই। এতে পরিবার নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এই ছাড়া অভিযুক্তদের হুমকিতে তিনি পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ভূক্তভোগী আবদুল মতিন রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে মো: মমিনসহ তিনি ফেনির দাগনভূঁইয়া এলাকায় রিকশা চালক।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছেলে মমিনের সঙ্গে তার স্ত্রী শিল্পি বেগমের কলহ রয়েছে। এনিয়ে মমিন তার স্ত্রীকে থাপ্পড় দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭ নভেম্বর শিল্পিসহ তার বাবা বাসু মাঝি, মা হোসনেয়ারা বেগম, আত্মীয় শাহিনুর আক্তার, আবদুর রহিম ও জসিম উদ্দিন বাড়িতে এসে মমিনকে পিটিয়ে আহত করে। মমিন চিকিৎসা না নিয়েই ঘটনার দিন দাগনভূঁইয়া চলে যান। সেখানে সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। পরদিন আবদুল মতিন বাড়িতে এসে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগতি আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি দাগনভূঁইয়া চলে যান।
মামলার বিষয়ে জানতে পেরে ২৪ নভেম্বর রাতে বাসু মাঝিসহ অভিযুক্তরা রাতের অন্ধকারে আবদুল মতিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘরটি পুড়ে যায়। ছাই হয়ে যায় ঘরের আসবাবপত্র। ঘরের চালার টিনগুলো ভিটের ওপর পড়ে আছে। ঘরের বাইরে চালার সঙ্গে ঝুলানো কাঠের খোপে থাকা ৪০ টি কবুতর পুড়ে মারা গেছে। তবে ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
খবর পেয়ে বাড়িতে এসে মতিন রামগতি থানায় বাসু মাঝিসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন করেন। প্রতিবেশি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মতিনের ঘরের পাশেই আমার ঘর। অনেক চেষ্টা করেছি আগুন নেভাতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অসহায় মানুষটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আগুন জ্বলতে দেখলেও তখন কাউকে দেখেননি।
আবদুল মতিনের স্ত্রী আক্তারা বেগম বলেন, বাসু মাঝির লোকজন আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এতে ভয়ে ওই রাতে আমি ঘরে ঘুমাইনি। প্রতিবেশিদের ঘরে ঘুমিয়েছে। হঠাৎ ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। কিছুক্ষণ পরই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আমার সাজানো সংসার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আবদুল মতিন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার একমাত্র শত্রু বেয়াই বাসু মাঝি। আমি নোয়াখালী পাটওয়ারীরহাট এলাকার বাসিন্দা ছিলাম। দুই বছর আগে আমি এ গ্রামে এসে তার (বাসু) কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি কিনি। এর কিছু অংশে টিনের ঘর করে বসবাস করছি। বাকি অংশ এখনো আমাকে তিনি বুঝিয়ে দেননি। এখানে আসার পর তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিই। ছেলে তার স্ত্রীকে একটি থাপ্পড় দেয়। এতে তারা আমার ছেলেকে মেরে গুরুতর আহত করে। এনিয়ে মামলা করায় তারা আমার ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে বাসু মাঝি বলেন, আগুন লাগানোর ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। শত্রুতা করে অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মতিনের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন,মমিনকে মারধরের ঘটনার অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়েছেন।
তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রামগতি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন,আগুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে পায়নি। ঘটনাটি তদন্তু চলছে। প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের থানায় আসার জন্য বলা হয়েছে।