রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভূক্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রায় সত্তর লাখ টাকা লোপাট।

জহুরুল ইসলাম, শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ / ১৪ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরুর নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চালক নিয়োগ থেকে কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়োগে অর্থনৈতিক বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, গাড়ি ব্যাবহার না করেও তেলের টাকা লোপাট, মিটিং-সেমিনারের নামে বিরাট বাজেট দিয়ে লুটপাটসহ নানা অনিয়মে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পেড়িয়ে গেলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না হলেও নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন সাবেক দুই ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ কর্মকর্তারা। এসমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন খোদ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. এস এম হাসান তালুকদার। তিনি বলেন, যেখানে হাত দেওয়া হচ্ছে সেখানেই অনিয়ম। আর এসব অনিয়ম দুর্নীতির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা অনেকেই জড়িত। ইতোমধ্যে এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করতে ১৫টিরও বেশি কমিটি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এতোসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশব্যাপী যখন সমালোচনা তুঙ্গে তখনই নতুন করে আরও একটি লুটপাট ও ভাগবাটোয়ারার তথ্য উঠে এসেছে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছভূক্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের জন্য ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ পর্যন্ত শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য অগ্রীম নেওয়া হয়েছে ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই টাকা নেওয়ার দিন থেকে ২মাসের মধ্যে সমন্বয় করে বিল দাখিল করার কথা থাকলেও ২ বছর ৬ মাসেও বিল দাখিল করেনি কর্তৃপক্ষ। এরফলে এই টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে, কার পকেটে ঢুকেছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোয়াসা। বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি “অভ্যন্তরীন নীরিক্ষা কমিটি” করা হয়েছে। এই নীরিক্ষা কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিলেই কারা এই নয়ছয়ের সাথে জড়িত তা জানা যাবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়ার গত ১৯ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখা যায়, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম গুচ্ছভূক্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের টাকা থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন। ঐ চিঠিতে তাকে অতিরিক্ত অর্থ ফেরৎ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফখরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি কোন অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেননি। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাকে তার সম্মানি দেয়া হয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারনে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান না থাকায় চেয়ারম্যান হিসেবে পাওয়া সম্মানি ফেরৎ দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়ার কাছে গেলে তিনি চিঠির বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে বিস্তারিত কথা বলতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম হাসান তালুকদারের সাথে কথা হলে তিনি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে চাননি গুচ্ছভূক্ত পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অগ্রীম নেওয়া ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিষয়ে। তবে তিনি বলেছেন, অর্থ গ্রহণের ২ বছর ৬ মাস পেড়িয়ে গেলেও কোন প্রকার সমন্বয় বিল দাখিল করা হয়নি।

যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী অর্থ গ্রহণের ২ মাসের মধ্যে বিল দাখিল করার কথা থাকলেও আড়াই বছরের বিল দাখিল হয়নি সেক্ষেত্রে এখানে দুর্নীতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অসংগতি মনে হয়েছে বলেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেইসাথে তদন্ত নিরপেক্ষ করার জন্য ইউজিসি থেকেও এই তদন্তে একজন প্রতিনিধি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম শুধু একটি নয়, যেখানেই হাত দেওয়া হচ্ছে সেখানেই অনিয়ম, সেখানেই দুর্নীতি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ১৫টিরও অধিক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ শাহজাদপুরের আপামর জনতা এবং ছাত্র সমাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবীতে আন্দোলন শুরু করার পরেই একের পর এক থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসছে। বেড়িয়ে আসছে ক্যাম্পাস নির্মাণের চেয়ে কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কিভাবে করে তুলেছেন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারখানা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর