ফেসবুকে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়ায় শিক্ষার্থীর উপর হামলা।

ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডিমলায় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের হামলার শিকার হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ডিমলা থানায় মামলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম রেজাউল করিম । তিনি উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেষা ঘাটের পাড় গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও নীলফামারী সরকারি কলেজের এমবিএ শিক্ষার্থী এবং জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক।
মামলায় চিহ্নিত মাদক ও অবৈধ গরু ব্যবসায়ী পশ্চিম ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা পিয়ারুল ইসলাম, নুর আলম, নুর ইসলামসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের নামে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, নীলফামারীতে আমরা শিক্ষার্থীরা মিলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচার পতনের পর এলাকায় এসেছি। নিজের এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারিদের ব্যাপক বিস্তার দেখে বালাপাড়া বিজিবি কমান্ডারকে বিষয়টি জানাই। কোন সুরাহা না পেয়ে গত ১৯ জানুয়ারি ফেসবুকে লিখি-আজ সকাল ৬ টার দিকে পশ্চিম ছাতনাই এলাকায় ভারত থেকে অবৈধ গরু ও মাদক  আনার সময় চোরাকারবারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে ভারতীয় বিএসএফ। এরপর বিজিবি- বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সীমান্তে যেন স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ না যায়। আমার প্রশ্ন হলো- চোরাকারবারিদের জন্য সাধারণ মানুষ ভুগবে কেন ? এসব চোরাকারবারি কারা ? কারা এদের নেতৃত্ব দেয়? কেন সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরেও চোরাচালান সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে আছে। প্রশাসন কি করে? জাতি জানতে চায়? যারা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করে তাদের চাষাবাদ থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে বর্ডারের কাছাকাছি যেতে হয়। চোরাকারবারিদের কারণে ভারতের বিএসএফ যদি একটা সাধারণ মানুষের উপরেও হামলা করে। এর দায় পুরোপুরি প্রশাসনকে নিতে হবে।
এরপর সন্ধ্যায় আমার ওপর হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ী ও গরু চোরাকারবারি পিয়ারুল-নুর আলমসহ তাদের সঙ্গীরা। মারধর করার পাশাপাশি আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য মৃত্যুর হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি ডিমলা বৈষম্যে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  প্রতিনিধিদের জানালে তারাও ঘটনাস্থলে এসে হামলার শিকার হয়েছেন।
ডিমলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান ও শাকিল প্রধান বলেন, ওই দিনসন্ধ্যায় খবর পেয়ে আমরা ঠাকুরগঞ্জ বাজারে যাই। সেখানে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পিয়ারুল- নুর আলমসহ ২৫-৩০ জন আমাদের পথরোধ করে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে ‘হয় সীমান্তে তোরা থাকবি না হয় আমরা ব্যাবসা করবো’। এ সময় মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও করার চেষ্টা করলে কেড়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। আরেকজনের স্মার্টফোন পকেটে ছিল, সেটিও লাথি মেরে ভেঙে ফেলে। আমাদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন চলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ডিমলা থানায় মামলা করা হয়েছে।
রেজাউলের বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ছেলে কলেজে পড়ে। সে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সংগ্রাম করেছে। অথচ নিজের এলাকায় সীমান্ত দিয়ে  মাদক ও চোরাচালান নিয়ে কথা বলায় হামলার শিকার হয়েছে। এটা দুঃখজনক। হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে মাদক ও গরু চোরাকারবার করে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ভারতের সীমান্তবর্তী ডিমলা উপজেলা। ভারতের সঙ্গে ডিমলার সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় গরু ও মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে। বিজিবি এসব দেখেও না দেখার ভান করে। তাদেরকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়না।
শিক্ষার্থী রেজাউল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের ওপর হামলার ঘটনাটি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা জানান অনেকে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় অভিযুক্তদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালাপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার সাইফুর জামান বলেন, তথ্য প্রমান ছাড়া কাউকে আটক করা সম্ভব নয়। চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবি সবসময় তৎপর রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলা এজাহারভুক্ত করা হয়েছে । ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলানো হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *