শিরোনাম
실시간 메이저사이트, 풋볼스피크 추천 플랫폼 How To Handle Every MEGA Challenge With Ease Using These Tips দুর্গাপুরে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্র পরিচালক ও পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ। ডিমলায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। গাঁজায় চলম ধ্বংসষজ্ঞ ও প্রানহানীর প্রতিবাদে ডিমলায় বিক্ষোভ। গাঁজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মাধবপুরে বিক্ষোভ মিছিল। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ মিছিল। ইহুদীদের সাথে হযরত মুহাম্মদ (স.) জামাকে তুলনা করায় মৌলভীবাজারে প্রতিবাদ। কালিয়াকৈর চাপাইর তুরাগ নদীতে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার। উল্লাপাড়ায় শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা অভিযোগ।
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢলুবাঁশের চুঙ্গাপুড়া পিঠা।

জালাল উদ্দিন, নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ / ৩৫ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌলভীবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না।
একটা সময় ছিল বাজারে মাছের মেলাও বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা বা রিসা পরিবেশন না করলে যেন লজ্জায় মাথা কাটা যেত। বর্তমানে সেই দিন আর নেই।
চুঙ্গাপুড়া পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগর-সহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ি ও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে।
অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।
এদিকে, পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারসমূহে বিক্রির আশায়। বাঁশটিও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না, কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমাণে খেড় (নেরা) দরকার পড়ে। খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।
একটা সময় ছিলো শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময় এ বাঁশগুলো কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, আদমপুর, মুন্সীবাজার-সহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়িও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায়, হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।
ঢলুবাঁশের পিঠা তৈরী করার জন্য সদর উপজেলার হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রহ.) মেলায় ঢলুবাঁশ কিনতে আসা মাসুদ মিয়া বলেন, চুঙ্গাপিঠার বাঁশ কেনার জন্য এসেছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা এ পিঠা বানিয়ে খেতেন। ২ আটি বাঁশ ৬০০ টাকা দাম চাচ্ছেন। আমি ৫০০ টাকা বলেছি। আমরা প্রতিবছর এখান থেকে বাঁশ নিয়ে পিঠা বানিয়ে খাই।
ক্রেতা দৈনিক জনসংগ্রাম পত্রিকা’র সম্পাদক ও প্রকাশক, সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, চুঙ্গাপিঠা খাওয়ার জন্য বাঁশ কিনতে এসেছি। আগের মুরুব্বিরা চুঙ্গাপিঠা খেতেন শুনেছি। আমরা কখনো খাইনি, এবার খেয়ে দেখব কেমন মজা হয় চুঙ্গাপিঠা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুরের বাঁশ বিক্রেতা হাসিম মিয়া বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রয় করে এনে ৫/৬ টাকা দামে পিস হিসেবে বিক্রি করি। আস্তাবাঁশ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করি। এখন বাঁশ পাওয়া যায় না। তবে দেওড়াছড়া, প্রেমনগর এবং গিয়াসনগর বাগানে কিছু কিছু বাঁশ পাওয়া যায়। পাঁচশো বাঁশ এনেছিলাম। প্রায় চার হাজার টাকা বিক্রি করেছি।
আরেক বাঁশ বিক্রেতা কালাপুরের মুজাহিদ মিয়া বলেন, আমি বিগত কয়েক বছর ধরে এখানে এসে বাঁশ বিক্রি করি। দিনে দিনে এই ব্যবসা কমতে আছে। এখনকার লোকেরা আগেকার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে না। শহরের লোকেরা এসব খেতে অভ্যস্ত নয়। এখনও গ্রামের মানুষরাই এ বাঁশ কিনে নিয়ে যায় আগের মতো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ তারেক মাহফুজ ও মোঃ আব্দুল করিম বলেন, আগে কম-বেশি সবার বাড়িতে ঢলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এই বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকত। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও প্রচুর মানুষের দেখা যেত। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর