শ্রীমঙ্গলে উদযাপিত হলো আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী “ওয়ানগালা”।
এলিসন সিঙ,মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
সময়
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
৬৫
বার দেখেছেন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা উৎসব পালন করেছে সিলেট বিভাগে বসবাসরত গারো সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। এই উৎসবকে গারো সম্প্রদায়রা বলেন “ওয়ানগালা”বা নবান্ন উৎসব ।জানা যায়, এক সময় গারো পাহাড় এলাকায় জুম চাষ হতো এবং বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’কে উৎসর্গ করে।
কিন্তু গারোরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন।
এই উৎসব মুখর ধারাবাহিকতায় রোববার(১লা ডিসেম্বর ) শ্রীমঙ্গল উপজেলা অধীনে ফুলছড়া গারোপাড়ায় জাঁকজমক ভাবে দিনব্যাপী পালন করেন এ ওয়ানগালা উৎসব ।এই ওয়ানগালায় খামাল(পুরোহিত)হিসাবে ফাদার জেমস শ্যামল গমেজকে গারো সম্প্রদায়ে কৃষ্টিগত কুটুব পড়িয়ে তাকে গ্রহণ করে নেন। তারপরে তিনি এই ওয়ানগালার পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন। তারই মধ্যদিয়ে এই ওয়ানগালা প্রথম পর্বটি শুরু হয়। খ্রিষ্টযাগে সহযোগীতা করেন শ্রীমঙ্গল কাথলিক মিশনের সহকারী পালপুরোহিত ফাদার রবার্ট নকরেক সিএসসি, ফাদার বার্ণাড টিউস নকরেক, ফাদার কল্লোল রোজারিও’সহ ব্রতধারী -ব্রতধারিণী গণ।
খ্রীষ্টযাগের শুরুতেই বেদির পাশে তৈরিকৃত পবিত্র ক্রুশে মালোদান ও কুটুপ পড়ানো হয়। সেইসঙ্গে উৎপাদিত প্রথম ফসলগুলো ক্রুশের নিচে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়। গারোদের ১২টি গোষ্ঠীর উদ্দেশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।।এছাড়াও ওয়ানগালার মূল অনুষ্ঠানের অংশ টক্কা, রুগালা, সাসাতসুআ (ধূপ পুড়ানো) ও উৎপাদিত ফসল আর্শীবাদ প্রদান হয় এই খ্রীষ্টযাগে।
খ্রিস্টযাগ শেষে দুপুর ২টায় অদ্যকার ওয়ানগালা খামাল(পুরোহিত) ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সিএসসি সভাপতিত্বে এবং মৌসুমি আরেং মৌ ও সামুয়েল হাজং যৌথভাবে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই ওয়ানগালা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসময় প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটি সদস্য প্রীতম দাশ, হুমায়ুন কবির মজুমদার, উপ-মহা ব্যবস্থাপক, ডিনস্টন ডিভিশন, মো:শাহারিয়া পারভেজ, ব্যবস্থাপক, চাতালি ডিভিশন, মাজদিহি, জনাব বিকাশ সিনহা, ব্যবস্থাপক, হরিণছড়া চা বাগান, ফিনলে,মৃণাল কান্তি দাশ, ওয়ানগালা উদযাপন কমিটি উপদেষ্টা মি: ফিলিক্স আাশাক্রা,সাবেক নকমা ক্ষিতিশ আরেং,ডবলছড়া পুঞ্জি মাতব্বর ভিক্টর সুমের,মাতব্বর এলিসন সুঙ, সেন্ট জোসেফ কো-অপারেতিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর ব্যবস্থাপক ডমিনিক সরকার রনি প্রমুখ,এবং এই অনুষ্ঠানে অতিথিদেরকে নিজস্ব গারো উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়ানগালা উদযাপন কমিটি আহবায়ক মি:পার্থ হাজং।
এই ওয়ানগালা উদযাপন উপলক্ষে গারো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিচিত্র পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতি ঢোলের তালে তালে নাচগান করেন। এটি গারোদের বছরের প্রধান বিনোদনের দিন। সারা গারো পাহাড় ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে গারোপাড়াগুলো।
আয়োজক কমিটি উপদেষ্টা মি: ফিলিক্স আাশাক্রা বলেন, গারোরা পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষ করতো এবং বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে ওঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী কিন্তু কালের পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করে থাকেন।’ওয়ানগালা’ অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, সাংমা, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজনসহ প্রায় এক হাজার জন এ ওয়ানগালায় উপস্থিত ছিলেন।