বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম”উদ্যোগে মৌলভীবাজার জেলা শাখার সন্মেলন।
এলিসন সিঙ,মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
সময়
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪
১১
বার দেখেছেন
উৎসব মুখর ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার প্রথমবার সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯নভেম্বর) জেলা শহরের সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট ডেডলি ডেরী প্রেন্টিস কবুতর উড়িয়ে এই সন্মেলটি শুভ উদ্বোধণ করেন।পরে আদিবাসীরা ব্যানার নিয়ে জ
জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে এসে এ শোভাযাত্রা শেষ হয়।
মৌলভীবাজার জেলা শাখার প্রস্তুতি সভার সদস্য সচিব জনক দেববর্মা ও সদস্য মনিকা খংলা যৌথ সঞ্চালনায় এ সন্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার জেলা শাখার প্রস্তুতি সভার আহবায়ক নারায়ণ কুর্মী।
এই সন্মেলনে অতিথি হয়ে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম সহ-সভাপতি মি:টনি ম্যাথিউ চিরান,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম,সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, বাংলাদেশ কমিনিষ্ট পার্টি নিলেমেষ ঘোষ বুলু, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুশীল মাহাতো, মৌলভীবাজার জেলার বাসদ সভাপতি এডভোকেট মঈয়নুর রহমান মগনু,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মি: এন্ড্রু সলোমার,বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট ডেডলি ডেরী প্রেন্টিস। সন্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন মিস ফ্লোরা বাবলী তালাং।
এ সময় বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন,বাংলাদেশ একটি জাতিবৈচিত্র্যের দেশ। এদেশে বাঙালী ছাড়াও বহু আদিবাসী জনগোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছে। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ২৫টির মত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী বসবাস করছে। সুদীর্ঘকাল ধরে তাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যতা নিয়ে বসবাস করে আসছে যা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী এসব আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীরা স্বাধীনতার ৫৩ বছরের পরেও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা নানাভাবে মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছেন। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এখনও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। তারা আজ অস্তিত্বের হুমকীর সম্মুখীন। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আদিবাসীদের ভূমির মালিকানাসহ বিভিন্ন সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে সমাধান হচ্ছে না। বনবিভাগ ও চাবাগান কর্তৃপক্ষ খাসিদের ঐতিহ্য ও প্রথাগত পান জুমের গাছ কর্তনের পাঁয়তারা সবসময় করে চলেছে। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী সূর্যগুরা পান গাছ কর্তন ও চুরি করছে। বনবিভাগ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষ খাসি ও গারোদের মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে চলেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্টের নামে ত্রিপুরাদের প্রথাগত ভূমি দখলের পাঁয়তারা ক্রমাগত চলমান রয়েছে। চা-বাগানের শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরী ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত যা তাদেরকে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে।
ইদানিং এসটিসির ১৮ টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের তিন মাস ধরে মজুরী বন্ধ। ফলে চা শ্রমিকরা না খেয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে। বা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মস্পর্শী। ১৭ মাস ধরে শ্রমিকদের পিএফ এর প্রদানকৃত টাকা বাগান কর্তৃপক্ষ পিএফ অফিসে জমা দিচ্ছেনা।
এ সম্মেলনে বক্তরা সরকার কাছে দাবি জানিয়ে আরও বলেন, আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রনালয় গঠন করতে হবে, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, চা জনগোষ্ঠীর ন্যায্য মজুরী ও ভূমি অধিকার দিতে হবে, সামাজিক বনায়নের নামে আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি জোরপূর্বক দখল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, ঝিমাই পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, মুরইছড়া ইকো-পার্ক প্রকল্প বাতিল করতে হবে, খাসিয়া পুঞ্জির পানগাছ কাটা ও চুরি বন্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
পরে কাউন্সিল মধ্যদিয়ে ৩১সদস্য বিশিষ্ট একটি জেলা শাখা কমিটি গঠন করা হয়।এই সন্মেলনে উপস্থিত আদিবাসী জনতা কাছে নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম ও নবগঠিত কমিটি সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করে শপথ করান বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুশীল মাহাতো প্রমুখ।
এই সন্মেলনে মৌলভীবাজার জেলার অধীনে সাত টি উপজেলা থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আদিবাসীরা প্রায় ৫’শত জনের অধিক অংশগ্রহণ করেন।