উল্লাপাড়া(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার চলনবিলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে দেশী মাছের শুটঁকি উৎপাদন করেন শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা। উন্নত প্রক্রিয়ায় ভালো মানের উৎপাদিত শুঁটকি মাছের চাহিদা কমবেশি সারাদেশেই রয়েছে। যে কোন অঞ্চলের তৈরি করা শুঁটকি মাছের তুলনায় চলনবিলাঞ্চলের তৈরি করা দেশী মাছের শুঁটকি খেতে সুস্বাদু ও মজাদার।
উপজেলার বড়পাঙ্গাসী,উধুঁনিয়া ও মোহনপুর ইউনিয়নসমূহ চলনবিল অধ্যুসিত এলাকা। এখানে বছরে ৬ মাস শুষ্ক ও ৬ মাস বর্ষার পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এই অঞ্চলের দরিদ্র কৃষক শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজ ও বর্ষা মৌসুমে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। ফসলের মাঠ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় মাটির উর্বর শক্তি বেশি। ফলে কৃষক তাদের জমিতে উন্নত জাতের ধান,রবি শস্য ও শাকসবজির চাষ করে অধিক অর্থ উপার্জন করে।বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকারীরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করে অর্থ উপার্জন করে।গত বর্ষা মৌসুমে চলনবিলে ৬৫০ মেট্রিকটন ছোট বড় বিভিন্ন জাতের দেশী মাছ শিকার করে ৯০ মেট্রিকটন শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেছিল শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা।
চলতি বছরে শুঁটকি মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ মেট্রিকটন ধরা হলেও শুঁটকি উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ নিধন করায় দেশী মাছের আমদানি কমে গেছে। এ কারণে শুঁটকি পল্লী এলাকাগুলো অনেকটাই ফাঁকা।এতে শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুঁখে পরেছে।
মৌসুমকালের শুঁটকি মাছ উৎপাদনের ফলে অনেক নতুন ব্যবসায়ী গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত শুঁটকি মাছ যশোর,রংপুর,জামালপুর ও ঢাকায় বিক্রি করেন।প্রতি বছর শুঁটকি পল্লীতে বেশি পরিমাণ মাছ আমদানি করা হয়।শুঁটকি উৎপাদন কর্মীদের কর্মব্যস্ততা থাকে কিন্তু এ বছরের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এ বছর মাছ আমদানি কম হওয়াতে শুটঁকি উৎপাদন কর্মীদের কাজের পরিধি কমে যায়। এর প্রভাব তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর পরেছে।
বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলি গ্রামের জয়ন্তী দাস, খুশী খাতুন, শাহিনুর খাতুন জানান প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে শুরু থেকে অন্তত ৮ মাস পর্যন্ত শুটঁকি পল্লীতে কাজ করে সংসার চালান তারা। কিন্তু এ বছর দেশীয় প্রজাতির মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় তাদের কাজের পরিধি অনেকটাই কমে গিয়াছে ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন তারা। চলনবিল এলাকায় রিংজাল,চায়না জাল,কারেন্ট জাল দ্বারা প্রচুর মা মাছ নিধনের কারণে শুঁটকি পল্লীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন নজরদারি বৃদ্ধি না করলে লক্ষ্য মাত্রায় শুঁটকি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
বড়পাঙ্গাসীর শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী বায়জিদ হোসেন জানান প্রতি বছর আমাদের শুঁটকি পল্লীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদন করা হয় কিন্তু চলতি বছরে মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় কাংখিত পরিমান শুঁটকি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। তিনি আরোও বলেন চলনবিলে প্রতি বছর পানি কমে গেলে প্রচুর পরিমান দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় কিন্তু এ বছর কিছু অসাধু মাছ শিকারীর কারণে মাছ আমদানি করা যাচ্ছে না। তারা রিংজাল,কারেন্ট জাল, চায়না জাল সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে মা মাছ নিধন করার কারণে মাছ আমদানিতে শঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্যেই শুঁটকি মাছ উৎপাদন কমে গেছে।তিনি চলনবিলের শুঁকটি মাছ যশোর, রংপুর, ঢাকায় বিক্রি করেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আতাউর রহমান জানান ২০২৩-২৪ বছরে চলনবিল উল্লাপাড়া অংশে ৬৬০ মেট্রিকটন শুঁটকি মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা এখন পর্যন্ত সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে চলনবিলে মা মাছ নিধনের বিষয়ে তাদের অভিযান অব্যহত ছিল।