উল্লাপাড়া(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ হালকা কুয়াশা গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে পৌছে দিচ্ছে শীতের পূর্বাভাস। শীতের পূর্বাভাস দেখেই খেজুরের রস আহরণে গাছ প্রস্তুত করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে উল্লাপাড়ার গাছিড়া। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে খেজুরের রস ঢগ ঢগ করে খাওয়ার স্বাদই আলাদা। এই সুস্বাদু খেজুর রসের বাহার গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঐতিহ্য মনে করে বাড়ীর আঙ্গিনায় বা পুকুর পাড় বা রাস্তার ধারে লাগানো খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কেউ করছে সখের বসে,কেউ বা করছে জীবিকার তাগিদে। মিষ্টি রস থেকে অনেকেই তৈরি করছে খেজুরে গুড়। শীত ঘনীভুত হলে সকালে বাড়ির উঠানে রোদে বসে নিজের হাতে তৈরি করা গুড় দিয়ে মুড়ি,ভাপা পিঠা ও দুধের পিঠা তৈরির নবান্ন উৎসবে মেতে উঠে অজোপাড়া গাঁয়ের মানুষ। এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে কউ খেজুর গাছ চাষ করে না।
গাছিদের নিপুণ হাতে দা আর কোমরে দড়ি বেঁধে গাছ চাঁচাছেলার কাজে রয়েছে আলাদা নিপুণতা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমরে(দড়ি)বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করে থাকেন।ক’দিন পর থেকে শুরু করবেন রস সংগ্রহের কাজ। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বেঁধে রাখবেন।সারা রাত রস ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে হাড়ি পূর্ণ হবে। গাছিরা সকালে রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটায়। কেউবা রস জাল করে খেজুরে বা পাটালি গুড় তৈরি করে থাকেন। আনসিজনে ভালো দামের আশায় গুড় সংরক্ষণ করেন।
উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের পঞ্চক্রোশী গ্রামের মোক্তার হোসেন নামের গাছি প্রতিবেদককে জানান ক’দিন পর থেকে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়বে এ কারনে খেজুর গাছের আবর্জনা পরিষ্কার ও চাচাছেলার কাজ করছি। পর্যাপ্ত খেজুর গাছ ও রস জাল করার উপকরণ না থাকায় আমরা গুড় তৈরি করে বিক্রি করতে পারি না। রাতে হাড়ি লাগিয়ে ১০/১২ কেজির মতো রস পাওয়া যায়। সকালে বাজারে কাঁচা রস বিক্রি করে চাল ডাল কিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে দু’বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।
কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা মো.ওয়াজেদ আলী জানান উপজেলায় কোথাও বাণিজ্যিক ভাবে খেজুর বা তালের চাষ হয় না। বিদ্যুৎ চমক থেকে রক্ষার পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু তালগাছ রোপণ করা হলেও খেজুর গাছ রোপন করা হয়নি। প্রকৃতির আদলে জমি,রাস্তা বা বাড়ির আঙ্গিনায় কিছু খেজুর বা তালগাছ জন্ম নেয়। গাছিরা ওই সকল গাছ থেকে শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে। গ্রামাঞ্চল মানুষের পুরাতন ঐতিহ্য প্রকোপ শীতের সকালে সুমিষ্টি খেজুর রস ও খেজুরে গুড়ের দুধের পিঠা,ভাপা পিঠা,মুড়ি খাওয়ার উৎসব করে থাকে।কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।