ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলায় নির্বিকারে চলছে অবৈধভাবে পুকুর খননের নামে মাটি ও বালু উত্তোলন। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লংঘন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষি জমি নষ্ট করে পুকুর খননের নামে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে একটি প্রভাবশালী ভূমি মালিক ও স্কেভেটর মালিক। বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও পুকুর সংস্কারের নামে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এ বলা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার আশপাশ থেকে বিপণনের উদ্দেশ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রভাবশালী একটি মহল অপরিকল্পিত ভাবে কৃষি জমির উর্ব্বর মাটি কর্তন, পুকুর খনন, পুরাতন পুকুরের তলদেশ গভীর করে বালু উত্তোলন করছে। ওই বালু ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ জনপথ, পাঁকা সড়ক। তিন ফসলি কৃষি জমি ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন কিছুই দেখছে না।
প্রকাশ্যে ফসলি কৃষি জমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কর্তন করে ট্রাক্টরে পরিবহনের জন্য পাঁকা রাস্তা ও গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মাটি-বালু যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির কাজে। বালু-মাটি বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তা গুলো বেহাল দশায় পরিনত। সড়ক গুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার সর্ব্বস্তরের সাধারণ জনগনকে। সড়ক সংস্কারে সরকারের খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমান সময়ে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে পুকুর খননে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে উপজেলার একাধিক গ্রামেই তিন ফসলি আবাদি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন চলছে।
অত্র ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া গ্রামের লিয়াকত হোসেন তার নিজস্ব আড়াই বিঘা জমিতে ইস্কেভেটরের (ভেকু) দিয়ে নতুন পুকুর খনন করছে। এই পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ীর পাশে জমি হওয়ায় ফসল ভালো হয় না। বর্তমান মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় পুকুর খনন করছি।
ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার জন্য ভূমি অফিস অথবা মৎস্য অফিসের কোন অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমার জমিতে আমি পুকুর খনন করব কার অনুমতি লাগবে। তবে ইস্কেভেটরের (ভেকু) মালিক ও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুকুর খনন করছি।
ট্রাক্টর ড্রাইভার মজিদ, মিলন, আলম, শামীম বলেন, বর্তমান উপজেলায় প্রায় ৫ থেকে ৬টি স্কেভেটর (ভেকু) এবং কয়েক শতাধিক ট্রাক্টর চলছে। সবাইকে ম্যানেজ করে আমরা এসব চালাচ্ছি। মাটি ও বালুর টলি কত টাকায় বিক্রি হয় জানতে চাইলে বলেন, মাটি-বালু ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের প্রভাবশালী এক ব্যক্তি তিস্তা নদীর ডান তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্বপন বাঁধ সংলগ্ন পুকুর খননে হুমকির মুখে তিস্তা নদীর ডান তীর। এ বিষয়ে এলাকাবাসী পক্ষে আনোয়ারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের হোসেনের মোড় এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন নামের এক স্কেভেটর (ভেকু) মালিক এবং সাহাবুল ও জাহিদ নামের টলির মালিক ওই এলাকার শফিকুল ইসলামের একটি পুকুর খননের কাজ করছেন। সে দিনের বেলায় পুকুরের মাটিকাটে এবং রাতভর ওই পুকুরের পলিমাটি স্কেভেটর দিয়ে সরিয়ে গভীর রাতে বালু উত্তোলন করে।
পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবাশীষ কুমার রায় বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিমলা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার সংবাদকর্মীদেরকে বলেন, সরকারি নিয়ম-নীতির বাহিরে পুকুর খননের কোন সুযোগ নেই। পুকুর খননের নামে বাণিজ্যিক ভাবে বালু উত্তোলন হলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।