দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি :অসময়ে তীব্র ভাঙন ধরেছে ব্রহ্ম পুত্র নদী বিলীন হয়ে যাচ্ছে তীরবর্তী ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বসতবাড়ি। এমন ঘটনা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকায়। অসময়ের ভাঙনে আবাদি জমি ও বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় বিচলিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে সানন্দবাড়ী হাটবাজার। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই হাটবাজার। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড় ঘেঁষে প্রবল স্রোত। পানি কমে যাওয়ায় নদের বুকে জেগে উঠেছে ছোট-বড় বালুচর। পূর্ব পাড়ে তীব্র স্রোত থাকায় ভাঙ্গছে অবিরত। গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে নদে চলে গেছে সানন্দবাড়ীর পশ্চিমের কয়েকটি গ্রাম। এর মধ্যে রয়েছে সানন্দবাড়ী মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া, পাটাধোয়াপাড়া ও খোলাবাড়ী। বিলীন হয়েছে অন্তত দুই হাজার পরিবার এবং কয়েক হাজার একর ফসলি জমি।
প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গতে শুরু করে নদটি। কিন্তু এবার শীতকালেই ব্রহ্মপুত্র নদে তাণ্ডব চলছে সানন্দবাড়ী পাটাধোয়াপাড়া, মণ্ডলপাড়ার একাংশ ও মৌলভীরচরের একাংশে। ভাঙ্গন থেকে বসতভিটা রক্ষায় উপর মহলে ছুটছেন কেউ কেউ। সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়ার ময়নাল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গন চলছে।
ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে পাটাধোয়াপাড়া, মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পাটাধোয়াপাড়া ও খোলাবাড়ী গ্রাম। এসব গ্রামের নিঃস্ব লোকজন জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়ার আপেল মাহমুদ বলেন,এক সময় আমাদের আবাদি জমি ও বসতিভিটা সব ছিল। সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে সব বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। দিনমজুরি করে দিনযাপন করছি। আমাদের দুঃখ যেন এত দিনেও ঘুচছে না। এখন অসময়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, মাথা গুজার শেষ সম্বলটুকুও বুঝি শেষ হয়ে যায়। নুর আলম বলেন- প্রতিবছর বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এবার শীত মৌসুমেও ভাঙ্গছে।
পল্লী পশু চিকিৎসক বাহেজ আলী বলেন, ‘আমাদের বড় দুঃখের কপাল। আগে আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি সব ছিল। সর্বনাশা নদে সব কেড়ে নিয়েছে। এখন আমরা সহায়-সম্বলহীন। অন্যের জমিতে আশ্রয় নেওয়ার মত উপক্রম হয়েছে।’ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন থেকে সানন্দবাড়ী এলাকা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লাভলু বলেন, বর্ষাকালে এ নদের ভাঙ্গন তীব্র হয়। কিন্তু এ বছর অসময়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, তাতে এলাকাবাসী দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এভাবে ভাঙ্গলে দু-এক বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের উৎস সানন্দবাড়ী হাট বাজার।
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলামের ভাষ্য, অসময়ে নদের এত তীব্র স্রোত আগে কখনও দেখেননি তিনি। তীব্র ভাঙ্গনে কয়েক বছরেই নদ গর্ভে সানন্দবাড়ীর কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পাড়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে পাটাধোয়াপাড়া, মণ্ডলপাড়া ও মৌলভীরচরের একাংশ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙ্গনের কবলে পড়বে সানন্দবাড়ী সদর। নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানান তিনি।
ভাঙ্গনের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স। পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন তিনি।
জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- সানন্দবাড়ীর ভাঙ্গন কবলিত ৯০০ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রাক-প্রতিরক্ষামূলক কাজ করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই স্থানে স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গন রোধে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার। ভাঙ্গন রোধের প্রকল্পটিতে ইটের ব্লক করে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধ করা হবে।
Post Views: 725