এলিসন সুঙ,মৌলভীবাজারঃনতুন ফসল ঘরে তুলতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করেছে সিলেট বিভাগে বসবাসরত গারো সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। এই উৎসবকে গারো সম্প্রদায়রা বলেন “ওয়ানগালা”। এটি তাদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আগত বছর যেন ফসল ভালো হয়, সন্তান ও পরিজনরা যেন ভালো থাকে আর দেশের যেন মঙ্গল হয় এই কামনায় শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো পল্লীতে উৎসব পালিত হয়।
এ উৎসবকে ভিক্তি করে রবিবার (২৬নভেম্বর) সকাল ১১টায় খ্রিষ্টযাগ মধ্যদিয়ে প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।মহা খ্রীষ্টযাগ অর্পণ করেন সিলেট কাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, সহযোগীতা করেন শ্রীমঙ্গল কাথলিক মিশনের পালপুরোহিত ড.ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সিএসসি, ফাদর রবার্ট নকরেক সিএসসি’সহ ব্রতধারী -ব্রতধারিণী গণ।
খ্রীষ্টযাগের শুরুতেই বেদির পাশে তৈরিকৃত পবিত্র ক্রুশে মালোদান ও কুটুপ পড়ানো হয়। সেইসঙ্গে উৎপাদিত প্রথম ফসলগুলো ক্রুশের নিচে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়। গারোদের ১৩টি গোষ্ঠীর উদ্দেশে মুসিবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।এছাড়াও ওয়ানগালার মূল অনুষ্ঠানের অংশ টক্কা, রুগালা, সাসাতসুআ (ধূপ পুড়ানো) ও উৎপাদিত ফসল আর্শীবাদ প্রদান হয় খ্রীষ্টযাগে।
এই উৎসবে দ্বিতীয় অধিবেশন রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ দিকে দুপুরে ওয়ানগালার মূল প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা এবং স্বাগত বক্তব্য দেওয়া হয়। এ সময় ধর্মযাজক’সহ শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন,শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত,মনিপুরী ললিতকলা একাডেমী গবেষণা কর্মকর্তা প্রবাস কুৃমার সিংহ,গোলাম মোস্তাফাসহ আদিবাসী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গারো পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষ হতো এবং বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে ওঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী কিন্তু কালের পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করে থাকেন।’ওয়ানগালা’ অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, সাংমা, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে গারো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিচিত্র পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতি ঢোলের তালে তালে নাচগান করেন। এটি গারোদের বছরের প্রধান বিনোদনের দিন। সারা গারো পাহাড় ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে গারোপাড়াগুলো।