আনোয়ার হোসেন,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশরী মালিপাড়া দুর্গামন্দির কমিটি। গতকাল রোববার মন্দির কমিটির সভাপতি দীনেশ মালাকার ও সম্পাদক নিরেন চন্দ্র শীল এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাণীশংকৈলের ইউএনও শাহরিয়ার পুলিশসহ ভদ্রেশরী মন্দিরে যান। সেখানে গিয়ে মন্দির কমিটির লোকজনকে বলেন সাবেক কমিটির সভাপতি পবন শীলকে কেন ডাকা হয়নি। জবাবে মন্দির কমিটির সভাপতি-সম্পাদক বলেন, পবন মন্দিরের দায়িত্ব পালনকালে মন্দিরের চার শতক জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন। মন্দিরের জমিতে কলাগাছ লাগিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করেছেন, প্রতিমা ভাঙচুর করেছেন। এ ছাড়া তিনি বর্তমান পূজা কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। জেল খাটিয়েছেন। তাই তাঁকে ডাকা হয়নি। এসব কথা শোনার পর ইউএনও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমরা অন্যের জমিতে অবৈধ পূজা করো, জোড়-বিজোড় কমিটি গঠন করেছো। এখানে যদি হট্টগোল হয়, তাহলে কমিটির অস্তিত্ব রাখব না।’
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার এই ধরনের হুমকিতে পূজা উদ্যাপন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগছে কমিটি।
এদিকে গতকাল রোববার ভদ্রেশরী মালিপাড়া মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রেশরী মন্দিরের সামনের একটি কাঠের চৌকিতে প্রতিমা নির্মাণ কারিগর পরেশ মালাকার বসে রয়েছেন। এ প্রতিবেদককে দেখে তিনিসহ স্থানীয়রা মন্দিরের সামনে এগিয়ে আসেন। মন্দিরের কাজ কতদুর এমন প্রশ্নে কারিগর পরেশ মালাকারসহ কয়েকজন নারী বলে উঠেন, ইউএনও তাদের পূজাকে অবৈধ পূজা বলায় তারা পূজার কাযর্ক্রম বন্ধ করে রেখেছেন।
এসময় পূজা কমিটির ১৭ বছরের সাবেক সম্পাদক চৈতু বণিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পূজা পালন করছি। শুনছি গতকাল ইউএনও এখানে এসে এই মন্দিরের পূজাকে অবৈধ পূজা বলেছে, যা দু:খজনক। গীতা রাণী, মহারাণী ও সমিতা রাণীসহ অন্তত দশজন নারী বলেন, দীর্ঘ দিনের পূজা মন্ডবকে অবৈধ বললেন ইউএনও। অবৈধ পূজা যখন, ইউএনও বৈধ ঘোষনা করবে তখন আমরা পূজা পালন করবো। তারা আরো বলেন, ইউএনও’র কারণে এবার বুঝি আমাদের পূজা পালন করা হবে না।
পূজা কমিটির সভাপতি দীনেশ মালাকার বলেন, ‘ইউএনও হুমকি দেওয়ায় আমরা প্রতিমা তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পূজা পালন হবে কি না, তা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। পূজা পালন না হলে এর দায় ইউএনওকে নিতে হবে।’
ধর্মগড় ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন অধিকারী বলেন, এই মন্দিরের জমিকে কেন্দ্র করে একটি মামলা চলমান রয়েছে। সেই মামলাকে কেন্দ্র করে ইউএনও এই মন্দিরে এসে বলেছেন এটি অবৈধ মন্দির। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক বয়সের মন্দিরকে ইউএনও অবৈধ মন্দির বলায় আপাতত পূজার প্রস্তুতি কাযর্ক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটির সঠিক সুরাহা না হলে আন্দোলনে যাওয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ারী দেন।
ভদ্রেশরী মালিপাড়া দূর্গা মন্দিরের সাবেক সভাপতি পবন শীলের বক্তব্য নিতে তার বাড়ীতে গেলে তিনি বাড়ীতে ছিলেন না। পরিবারের অন্য সদসর্যা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাণীশংকৈল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাধন বসাক বলেন, ইউএনও মন্দিরকে অবৈধ বলতে পারে না।ওই মন্দির নিয়ে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে ইউএনও আমাদের বলবে, আমরা উপজেলা কমিটি বিষয়টি দেখবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘মন্দিরের জমিটি খাস হলেও বন্দোবস্তের কারণে আপাতত ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে। জমির বন্দোবস্ত বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে গতবছর পূজায় হট্টগোল হয়েছিল। এ কারণে মন্দির কমিটির লোকজনকে ডেকে বলেছি, কোনো হট্টগোল যেন না হয়। তবে অবৈধ মন্দির বা জোর বিজোর কমিটি করা হয়েছে এ নিয়ে সেভাবে কথা বলা হয়নি।
ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুন ভুঁইয়া বলেন, অভিযোগটি এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউএনওকে বলা হয়েছে। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করবেন।
Post Views: 186