ঈর্শ্বরদীর স্থানীয় জনগনের মধ্যে পরমাণু শক্তি বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য রাশিয়ার রাস্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটমের পক্ষ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাইটে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। গত ৫ অক্টোবর সকালে ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাইটে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে রাশিয়া বাংলাদেশকে পারমাণবিক জ্বালানী হস্তান্তর করে। তবে, এই জ্বালানী হস্তান্তর উপলক্ষ্যে বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে রাশিয়ার রাস্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম।
এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল স্থানীয় জনগনের মধ্যে পরমাণু শক্তি বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা।এর মধ্যে গ্রীন সিটি’তে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ অংশ নেন। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মানতিতস্কিসহ রসাটমের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন। রসাটমের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
সূত্রমতে, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারনা প্রদানের জন্য মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এতে রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের সাধ্যে মত বিনিময় করে রুপপুর পরমাণু প্রকল্পের সুবিধাসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে সম্মোখ ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সভায় বিজ্ঞান ভিত্তিক গেম ‘গোল্ডবার্গ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রসাটম মহাপরিচালক বলেন, “তোমাদেরকে কোন নতুন আইডিয়া সৃষ্টি করার সাথে সাথে এর ব্যবহারিক বাস্তবায়নেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে”।
এর আগেও পারমাণবিক জ্বালানী বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর ২০টি স্কুলে ভিডিও প্রদর্শন ও লেকচার সেশনের আয়োজন করে রসাটম। প্রায় ১ হাজার স্কুল শিক্ষার্থী এই সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং অক্টোবরের প্রথমার্ধে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘প্রেসাইজ এনার্জী’ শীর্ষক দুই সপ্তাহব্যাপী একটি বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করে রসাটমের প্রকৌশল শাখার পক্ষ থেকে। এ আয়োজনে যুক্ত ছিল রাশিয়ার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘মেফি’। এতে সার্বিক সহযোগিতা করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। জুনিয়র গ্রæপে স্থানীয় ৩২টি স্কুল এবং সিনিয়র গ্রæপে স্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১হাজার ২’শ এর অধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। অলিম্পিয়াডের বিষয় ছিল গনিত, রসায়নশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যা। অক্টোবরের ২ তারিখে ঈশ্বরদীর একটি কম্যুনিটি সেন্টারে অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এতমস্ত্রয়এক্সপোর্টের হেড অফ কম্যুনিকেশন্স নিনা দেমেন্তসোভা এবং মেফি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের উপ-প্রধান আলেক্সান্ডার নাখাবভ। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামীমা খাতুন গনিতে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সজীব মিয়া পদার্থবিদ্যায়, এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ নিরব হোসেন রসায়নশাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করেন। জুনিয়র লেভেলে প্রথম স্থান অধিকার করে ভাষা শহীদ বিদ্যা স্কুলের শিক্ষার্থী মোঃ সাদমুন সাকীম।
পারমাণবিক বিদ্যুতের ইতিবাচক বিভিন্ন দিক তুলে ধরার লক্ষ্যে রূপপুরের গ্রীন সিটি’র সীমানা দেয়ালে ৩৮০ বর্গমিটার জুড়ে বর্নিল গ্রাফিটি অংকন করা হয় রসাটমের উদ্যোগে। গ্রাফিটির কাজ করেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী টিপু সুলতানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
রূপপুর প্রকল্পে স্থাপিত হচ্ছে দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১,২০০ মেগাওয়াট। প্রতিটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর, যেগুলো সকল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্টাক্টর রাশিয়ার রসাটম কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
ক্যাপশন-১ \ রূপপুরের গ্রীন সিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধান অতিথি রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
ক্যাপশন-২ \ রসাটম আয়োজিত ‘প্রেসাইজ এনার্জী ২০২৩’ শীর্ষক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের সঙ্গে এতমস্ত্রয়এক্সপোর্টের হেড অফ কম্যুনিকেশন্স নিনা দেমেন্তসোভা এবং মেফি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের উপ-প্রধান আলেক্সান্ডার নাখাবভ।
ক্যাপশন-৩ \ রূপপুর গ্রীন সিটির সীমানা দেয়ালে অংকিত বর্নিল গ্রাফিটি।