বাঘা(রাজশাহী)প্রতিনিধি:
আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হবে দেবী-বন্দনা। এদিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষের সূচনা হবে। মূূলত মহালয়া এলেই সবাই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যান, এখন থেকে দুর্গাপূজার ক্ষণ গোনা শুরু। শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে রাজশাহীতে চলছে প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। তাদের সুনিপুণ ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমাগুলো। এখন বাকি রং তুলির আঁচড়। বর্ণিল আয়োজনে ও শান্তি পূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকরাও। পাশাপাশি দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
তাইতো এখন ব্যস্ততা বেড়েছে প্রতিমা কারিগরদের। ফুরসৎ নেই দম ফেলার! এরই মধ্যেই নগরীর মন্ডুপে মন্ডুপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমালয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কারিগররা। সময়ের ব্যবধানে শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণ রূপ পাচ্ছে দেবীদুর্গার দৃষ্টিনন্দন সব প্রতিমা। প্রতিবারের ন্যয় এবারও রাজশাহী শহরে উৎসবমূখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বাংলা পঞ্জিকা মতে, গত দুই বছর অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবারে রয়েছে ভিন্নতা। এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। ১৪ অক্টোবর শনিবার পালিত হবে মহালয়া। শারদীয়া নবরাত্রি যারা পালন করেন; তাদের সেদিন থেকেই পূজা শুরু। পরে আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার পালিত হবে মহাষষ্ঠী। ২১ অক্টোবর শনিবার পালিত হবে মহাসপ্তমী। ২২ অক্টোবর রোববার পালিত হবে মহাঅষ্টমী। আর মহানবমী পালিত হবে ২৩ অক্টোবর সোমবার। পরেরদিন ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।
এদিকে দুর্গোৎসবের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হতে এখনো ১১ দিন বাকী থাকলেও ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নান প্রস্তুতি। ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকার মন্দির-মন্ডুপে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। এতে দারুণ ব্যস্ত শহরের প্রতিমা কারিগররা। কাদা-মাটি, খড়-কাঠ দিয়ে পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
শহরের আলুপট্টি এলাকার প্রতিমা কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, এখন থেকে প্র্রায় দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে চলছে প্র্রতিমা তৈরির কাজ। প্রায় ২০ থেকে ২৫টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন তিনি। প্রতিমায় মাটির বিভিন্ন কাজ এখন শেষের পথে। এখন চলছে মাটির সর্বশেষ পর্যায়ের কাজ। আর কয়দিন পরে প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙ-তুলির আঁচড়। পরে স্ব-স্ব মন্ডুপগুলোতে প্রতিমা পোঁছে দেয়া হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার জেলায় ৩৮৯টি ও মহানগরীতে ৭৯টি মন্ডুপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব মন্ডুপের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে। এজন্য দেয়া হয়েছে প্রায় ২৬টি নির্দেশনা। সবাইকে এই নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ র্যাব সদস্যরাও থাকবেন। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবো। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যেখানে-যেখানে প্রয়োজন বা নিরাপত্তার যে বিষয় থাকবে- তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে সেসব তাদের অবগত করা হবে এবং তাদের কাছে যে সকল তথ্য আছে সেগুলো আমাদেরকে জানাবেন। এভাবেই মূলত সমন্বিতভাবে উৎসবমুখর পরিবেশেই রাজশাহী মহানগরীতে শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।
রাজশাহী মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আইনজীবী শরৎ চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। মূলত নগরীর ধর্মসভা মন্দির থেকে পুরো শহরের পূজা মন্ডুপগুলোতে তদারকি ও মনিটরিং করা হবে। যদিও আমাদের রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ কোন ঘটনার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবুও আমাদের পক্ষ থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করার জন্য যা-যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, আমরা তা গ্রহণ করব।