সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে বন্টননামা দলিল, কমিশন দলিল, দানপত্র ঘোষণা দলিল, অকৃষি ও বাণিজ্যিক মিল, চাতাল শ্রেণির ভূমির দলিলে ৬% উৎস করের চাপে ফেলে দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে করের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে সাব-রেজিষ্ট্রার অনিমেষ পাল ও টিসি মহরার সালমা খাতুন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে দলিল লেখকদের উল্টো লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন টিসি মহরার সালমা ও সাবরেজিস্টার। ভুক্তভোগী দলিল লেখক ও দলিল গ্রহিতারা ভুমি রেজিষ্ট্রির নামে অবৈধ অর্থ আদায় বন্ধসহ সাব-রেজিষ্ট্রার অনিমষ ও টিসি মহরার সালমার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্তপূর্বক উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পরিচালক দুদক, আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতি মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উল্লাপাড়া সাব-রেজিষ্ট্রার ও টিসি মহরার সালমার অবস্থান এর বিপরীত। তারা প্রকাশ্যেই গ্রহন করে চলেছেন কোটি কোটি টাকার ঘুষ! যেন দেখার কেউ নেই।
অভিযোগের সূত্রধরে দলিল লেখক ও দলিল গ্রহীতারা জানান, সাব-রেজিস্টার অনিমেষ ২০২১ সালে এই অফিসে যোগদানের পরপরই তার পছন্দের টিসি মহরার সালমা খাতুনকে সলঙ্গা থেকে বদলি করে উল্লাপাড়া অফিসে নিয়ে আসেন। তারপর থেকেই সাব রেজিস্ট্রার অনিমেষ ও মহরার সালমা যোগসাজস করে উল্লাপাড়ার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে তুলেছে। ঘুষের সমঝোতা ছাড়া কোন রকম দলিল রেজিষ্ট্রি হয় না এই অফিসে। দলিল রেজিষ্ট্রির নামে এই দুই কর্মকর্তা দিনের পর দিন মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ আদায় করায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ব্যক্তিবর্গ।
সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাসে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার অনিমেষ কুমার পালের আর্শিবাদপুষ্ট টিসি মহরার সালমা খাতুন দলিল নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। দলিল রেজিস্ট্রির জন্য নির্ধারিত আয়কর ও ভ্যাটের টাকা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দেওয়ার পরও দলিল প্রতি অতিরিক্ত ঘুষের টাকা আদায়ে মহাব্যস্ত থাকেন টিসি মহরার সালমা। দলিল লেখকের ফি, স্ট্যাম্প ফি, এন ফিসের টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা সাব-রেজিষ্ট্রার অনিমেশ ও টিসি মহরার সালমার ঘুষ সিন্ডিকেটে জমা পড়ে। সেরেস্তায় সিন্ডিকেটের টাকা ব্যতীত কোন দলিলে সই করেন না সাব-রেজিস্ট্রার। এছাড়াও দলিলে বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। এদিকে দলিলের নকল তুলতেও গ্রাহককে গুণতে হয় সরকারি ফি’র দ্বিগুণ টাকা। প্রতিনিয়ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। এতে উল্লাপাড়ার সাধারণ মানুষ সাব-রেজিস্ট্রার অনিমেষ ও টিসি মহরার সালমার ঘুষ কেলেংকারীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, উল্লাপাড়া সাব-রেজিষ্টি অফিসে বিগত ২৯ ডিসেম্বর- ২০২১ ইং তারিখের রেজিষ্ট্রিকৃত ৮১৯৯, ৮২০১ ও ৮২০০ নং তিনখানা ৯ লাখ, ৯ লাখ ও ১২ লাখ টাকার দলিলে শ্রেণি হিসেবে মিল উল্লেখ থাকায় দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে ৬% টাকা সরকারি ভ্যাট (অতিরিক্ত) আদায় করেন সাবরেজিস্টার অনিমেষ পাল। এ বিষয়ে দলিল লেখক মো: নজরুল ইসলাম (সনদ নং- ৫০) টিসি মহরার সালমার সঙ্গে ৮০ হাজার টাকা ঘুষের মাধ্যমে বিষয়টি রফাদফা করে শেষ করেন। এভাবে সরকারি উৎস কর আদায় করে ব্যক্তিগত ঘুষ হিসেবে গ্রহন করায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
টিসি মহরার সালমা সামান্য বেতনে চাকরী করেও উল্লাপাড়া পৌরশহরের শ্রীকোলা দক্ষিণপাড়া মহল্লায় গড়ে তুলেছে বিশাল আধুনিক বহুতল ভবন। স্থানীয়দের ধারণা, নির্মাণাধীন এই বহুতল ভবনে ব্যয় হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা। তার এই অগাধ টাকার উৎস কোথায় ? সাব-রেজিষ্টার অনিমেষ পালেরও রয়েছে বগুড়া ও ঢাকা শহরে বিদেশী স্টাইলের দুইটি আধুনিক বাড়ী ও নামে- বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স।
সর্ব সাধারণ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন এই দুর্নীতিবাজ সাবরেজিস্টার অনিমেষ পাল ও টিসি মহরার সালমার দৌরাত্ম থেকে বাঁচার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
টিসি মহরার সালমা তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার অফিসের বসের নির্দেশ পালন করে শুধু কাজ করি। তার নির্দেশের বাইরে যেতে পারবো না।
উল্লাপাড়ার সাব-রেজিস্ট্রার অনিমেষ কুমার পাল বলেন, উল্লেখিত যে সমস্ত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা মনগড়া ও মিথ্যা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাড়ী গাড়ী ও ব্যাংক ব্যালান্সের প্রশ্নই ওঠে না।
সিরাজগঞ্জ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।