বাগেরহাটের রামপালে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মোঃ আবু সাঈদকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্য করায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৬ এপ্রিল বুধবার সকাল ১১.০০ টায় উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দীন হাওলাদার’র সভাপতিত্বে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে । সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মন্তব্য করায় বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রামপাল উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মোঃ আবু সাঈদ এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে আলহাজ্ব শেখ মোঃ আবু সাঈদ বলেন যে, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে গত ১৩ই এপ্রিল তার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সে সমাবেশে রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্লা আঃ রউফ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জামিল হাসান জামু তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে তিনি সমাবেশে জানান। শেখ মোঃ আবু সাঈদ বলেন যে, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোল্লা আঃ রউফ জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং একজন অসহায় বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জমির হারির টাকা না দিয়ে সে জমি ভোগ দখল করছেন । আলহাজ্ব জামিল হাসান জামু বর্ণালী ঘোষ হত্যা মামলার একজন আসামী ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের মুখে আমাকে নিয়ে সমালোচনা করা তাদের মানায় না। শেখ মোঃ আবু সাঈদ আরো বলেন যে, আওয়ামী লীগের দূর্দিনে ও বিপদের সময় মাঠে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর দলের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলেন যে, টিউবওয়েল’র টাকা আত্মসাৎ করে খুলনায় বাড়ি নির্মান করা, সরকারি জমি দখল করা ও আবুল কালাম ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত যে অভিযোগ গত ১৩ই এপ্রিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তিনি বলেন যে, টিউবওয়েল দেওয়ার জন্য যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তিনি তাদের প্রত্যেককে টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি সরকারি চরের যে জমিটি ভোগ দখলে আছেন, তা তিনি নিয়ম মাফিক-ই ভোগ দখল করছেন। তিনি আরো জানান যে, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে কোন দূর্নিতীর প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তিনি স্ব-ইচ্ছায় আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করবেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন যে, যারা তার বিরুদ্ধে দূর্নিতীর অভিযোগ তুলেছেন তারাই জনগণকে নানাভাবে হয়রানি করছে ও তাদের দ্বারা জনগণ দূর্নিতীর শিকার হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন যে, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি টেলিভিশনের ইলেকশন এক্সপ্রেস নামক অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন, তার কয়েকটি বিষয় তার বলা ঠিক হয়নি । ব্যস্ততা ও অপ্রস্তুতির কারণে কিছু কথা তার ভুল হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) যাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন, তিনি তার পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন দলের মধ্যে যে, বিভাজন তৈরি হয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশের সভাপতি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দীন হাওলাদার বলেন যে, পক্ষপাত মূলক আচরণের কারণে দলে সুস্পষ্ট বিভেদ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন যে, তারা বর্তমানে সংসদ সদস্যের কোটা ও উপজেলা পরিষদ থেকে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানকে কোন প্রকার বরাদ্দ দেওয়া হয়না। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করে থাকেন। নানামুখী কারণে দলে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে এবং এ দূরত্ব শুধু বেড়েই চলছে। তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, তাকে রামপাল-মোংলার সবাই অত্যন্ত ভালোবাসে। দলের সমূহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রতি অনুরোধ জানান।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন যে, আলহাজ্ব শেখ মোঃ আবু সাঈদ আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। তাকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল, তা সত্যিই দুঃখ জনক। কারণ আলহাজ্ব শেখ মোঃ আবু সাঈদ দূর্দিনে দলের পাশে থেকে দলকে যেমন সহায়তা করেছেন, একই ভাবে তিনি এলাকার গরীব-দুঃখী মানুষকে অর্থনৈতিক সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানায় দান, অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতাসহ নানামূখী সামাজিক কাজকর্ম করে থাকেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সকল বক্তারা রামপাল উপজলা আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভাজন তৈরী হয়েছে, তার শান্তিপূর্ন সমাধান কামনা করেন। তারা এও বলেন যে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আঃ খালেক মহোদয় একটু উদ্যোগী হলে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার হাফিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, উজলকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন জেড, গৌরম্ভা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রাজিব সরদার, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রবিউল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সরদার বোরহান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ চয়ন মন্ডল, বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মেহেদী হাসান রাজু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।