টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেধাবী ছাত্রের।
এই মেধাবী শিক্ষার্থী হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধ্যারই খুটিয়াটুলি গ্রামের বাসিন্দা রাজু হোসেন । তার স্বপ্ন আইন বিভাগে লেখাপড়া করার। কিন্তু এই স্বপ্নের পথে বাধা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে। কিন্তু পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকার কারনে ভর্তি বা পড়ালেখা করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে তার।
বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় ভ্যানচালক ও মা নাজমা বেগম হিমাগারের শ্রমিক। পড়াশোনার খরচ চালাতে রাজু নিজেও ইট ভাটার ট্রলির শ্রমিকের কাজ করে।
দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সে। বাড়ির পাশে মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.২২ ও রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে রাজু হোসেন।
রবিবার (১২ ফ্রেরুয়ারী ) দুপুরে অদম্য মেধাবী ছাত্র রাজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মা বাবা বাড়ি উঠোনে বসে আছেন। ছেলের এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলে উত্তীর্ণ হওয়ায় চোখে মুখে হাসি থাকলেও দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন ছেলের ভর্তির টাকা নিয়ে। কিভাবে জোগার করবেন ভর্তির টাকা। নিজের ভিটে-বাড়ি, জমিজমাও নাই যে বিক্রি করবেন।
রাজুর বাবা আনোয়ার জানান, ছেলেটা ছোট থেকেই মেধাবী। যার কারণে ওর লেখাপড়ায় কোন ভাটা পড়ুক তা চাইনি। কষ্ট করেই পড়িয়ে যাচ্ছি। কিভাবে যে তার ভর্তি পরীক্ষা জোগার করবো কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না। যদি কেউ সহযোগিতায় আসতেন, তাহলে তার স্বপ্ন পূরণ হতো।
ফলাফল প্রকাশের পর আলাপকালে রাজু জানায়, কি করবো আমি বুঝতে পারছি না ? ছোট বেলা থেকেই কষ্ট করে আসছি। কখনও কখনও না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি, কিন্ত বাদ দেইনি স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা। আমি এখন আইন নিভাগ পড়তে চাই। কিভাবে ভর্তি হবো, কিভাবে কী করবো এখন আর মাথায় কাজ করছে না।
আমার স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে আর্থিক অভাব অনটন। বেসরকারি এনজিও ‘আরডিআরএস, থেকে কিছু টাকা লোন করে রংপুরের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় পরিক্ষার জন্য। কিছু টাকা দিয়ে ভর্তি হলেও খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ বহন না করতে পারায় আর কোচিং-এ যাওয়া হয়নি তার । এখন কোচিং চলছে ভর্তি হওয়ার, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নাই যে ভর্তি হবো। আমি দেশের সকল বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাকে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিন।রাজুর মা নাজমা বেগম জানান ,’দুই ছেলে নিয়ে বহুকষ্টে জীবন চালিয়েছি।
এক পর্যায়ে মানুষের বাসায় কাজ শুরু করি। হিমাগারের নারী শ্রমিক হিসবে কাজ করি। তার বাবা ভ্যান চালাই। অর্থের অভাবে এক ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। বড় ছেলে রাজু ইটভাটার ট্রলির শ্রমিক ও কখনো ভ্যান চালিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এত কষ্ট করে আমার ছেলে পড়াশোনা করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। তবে এখন পড়াশোনা কীভাবে চালাবে সে চিন্তায় আছি’ বলেন নাজমা বেগম।
রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক সফিকুর ইসলাম আলম, ‘সে মাসে একদিন বা দুদিন কলেজে আসত। তার সংগ্রামের কথা সবাই জানি। সে আমাদের কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন এটা আমাদের গর্বের বিষয়। অনেক কষ্ট করে সে ভালো ফলাফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। গরিব অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা জরুরি।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, ‘রাজুর এই বিষয়টি আগে জানতাম না। জেনে খুশি হলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার পক্ষ থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করব ইনশাল্লাহ ।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার।
পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো উপায়ে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভাব। রাজু তাই প্রমাণ করেছে। রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং আমার ব্যক্তিগত থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।