উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
‘জন্মিলে মরিতে হয়’। মৃত্যুর পর মুসলিম সম্প্রদায়ের শেষ ঠিকানা হয় কবরস্থান। সেই শতাধিক কবরস্থানকে এনার্জি বাল্বের মাধ্যমে আলোকিত করে নন্দিত হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরসভার মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম। গত এক বছর ধরে পৌরসভা সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কবরস্থানকে আলোকিত করে আসছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা গ্রামের কবরস্থানকে আলোকিত করার মাধ্যমে একশো টি কবরস্থান আলোকিত করলেন মেয়র নজরুল।
মেয়র নজরুল বলেন, সাধারণত শহর বা গ্রামাঞ্চলের কবরস্থানগুলো গড়ে তোলা হয় নির্জন স্থানে। প্রত্যক কবরস্থান ঘিরে থাকে গাছ-পালা ও ঝোপ-ঝাড়। রাতের আঁধারে মরদেহ দাফন করতে স্বজন ও গ্রামবাসীর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। রাতের বেলায় কবরস্থান আলোকিত রাখতে আমি এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, মানসিক প্রশান্তি পেতে ব্যক্তিগত অর্থায়নে অন্ধকারাচ্ছন্ন কবরস্থানগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে চলেছি।
সম্প্রতি উল্লাপাড়া পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলার সলপ, পূর্ণিমাগাঁতী, হাটিকুমরুল, দূর্গানগর, পঞ্চক্রোশী, কয়ড়া, লাহিড়ী মোহনপুর, উধুনিয়া, বড়পাঙ্গাসী সহ ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কবরস্থানকে আলোকিত করা হয়েছে। সর্বশেষ সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা কবরস্থানকে আলোকিত করে একশো টি পূর্ণ করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় এক বছর ধরে অন্তত ১০০টি কবরস্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও এনার্জি বাল্ব লাগানোর কাজ করেছেন মেয়র নজরুল। আয়তনভেদে প্রতিটি কবরস্থানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে লাগানো হচ্ছে ৮ থেকে ১৫টি এলইডি বাল্ব। এছাড়াও পৌর এলাকার কবরস্থানগুলোর খাদেমদের পৌরসভার পক্ষ থেকে বেতন নির্ধারণ করার পাশাপাশি কবরস্থানের সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজেরও পৃষ্ঠপোশকতা করছেন মেয়র নজরুল। তার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা গ্রামের আব্দুল খালেক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, রাতের আঁধারে কবরস্থানে যেতে মানুষ ভয় পেতো। মানুষ মারা গেলে কবর দেওয়া কষ্টকর হতো। অনেকেই বাধ্য হয়ে সকাল পর্যন্ত লাশ নিয়ে বাড়ীতে বসে থাকতেন। অনেক গ্রামের কবরস্থানে মেয়র নজরুল বিদ্যুতের বাল্ব দিয়ে আলোকিত করায় এ সমস্যা থেকে সেসব এলাকাবাসী পরিত্রাণ পেয়েছে।
বড়পাঙ্গাসী গ্রামের আব্দুল গফুর ও উধুনিয়ার আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা বল্লে তারা জানান, রাতে কেউ মারা গেলে হারিকেন আর টর্চলাইট নিয়ে কবরস্থানে আসতে হতো। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কষ্ট করে দাফন করতে হতো। মেয়র নজরুল বিদ্যুৎ সংযোগসহ বাল্ব দেওয়ায় যাতায়াতে ও মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতে আর কোন সমস্যা হয় না।
উল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বিপু জানান, উল্লাপাড়া সহ বেশ কয়েকটি কবরস্থানের খাদেম ও মসজিদের ইমামের মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করেছেন মেয়র নজরুল।
জানতে চাইলে মেয়র নজরুল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জীবনের বাকি সময়টুকো মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এরই অংশ হিসেবে আত্মার প্রশান্তি থেকেই কবরস্থানগুলা আমি আলোকিত করছি। কোনো কিছু চাওয়া বা পাওয়ার আশা থেকে নয়, মানুষের কল্যাণে কবরস্থানগুলোকে আলোকিত করছি। ধারাবাহিকভাবে উপজেলার সব কবরস্থানকেই আলোকিত করবেন বলে তিনি জানান।