নীলফামারীর ডিমলায় কৃষকের সরিষা ক্ষেত নষ্ট,হাল চাষ করে বোরো ধান রোপন। জানা যায়, সারাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষককে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় মাঠ পর্যায়ের চাষীদের মাঝে পেঁয়াজ, ভুট্টা, টমেটো, সরিষা, গম, খেসারি, সূর্যমুখী ও বাদাম বীজ বিতরণ করা হয়েছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় বিনামূল্যে। তালিকাভুক্ত চাষীদের প্রত্যেককে ২০ কেজি গম, ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ, আট কেজি খেসারি, ১০ কেজি ভুট্টা, দুই কেজি সরিষাসহ বিভিন্ন পরিমাণে বীজ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে তেল জাতীয় শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের দোহল পাড়া মৌজার কামার পাড়া গ্রামে সরকারি প্রণোদনার বীজ নিয়ে সরিষা চাষ করে কপাল পুড়েছে প্রায় ৪৫/৫০ জন কৃষকের। কৃষি অফিসের বিতরণ করা সেই বীজে যৎসামান্য সরিষার গাছ হলেও কোন দানা নেই। মনের দুঃখে অনেকেই গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছে সরিষার গাছ। সরিষা না হওয়ায় কোথাও পড়ে আছে ফাঁকা মাঠ। কেউ আবার সরিষা ক্ষেতে পানি ঢুকাচ্ছে ইরি ধান রোপনের জন্য। আর এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ওই অঞ্চলের কৃষকরা। আবাদি জমিতে হাল চাষ করে সরিষা না হওয়ার কারণে অনেকেই এবার সরিষা চাষই করতে পারবেন না। এতে একদিকে তারা ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে জমি প্রস্তুত ও চাষের শুরুতে কৃষকদের বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। এতে অনেক অসচ্ছল কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। বিঘ্নিত হলো তেল জাতীয় শস্য উৎপাদন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কামার পাড়া গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার বেশিরভাগ জমির অনেক জায়গায় একটিও চারা গজায়নি কোথাও আবার ২/১টি গাছ হলেও তাতে ফুল নেই কোথাও আবার ১/২ হাত পর পর ২/৩ টি গাছ। সরিষা চাষিরা বলছেন, মূলত সরকারি প্রণোদনার বীজেই এই সমস্যা হয়েছে। চাষীরা বলছেন, এসব বীজ মেয়াদোত্তীর্ণ ও অত্যন্ত নিম্নমানের। সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের বীজ কিনে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের ব্যাপক তছরুপ হচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। কামার পাড়া এলাকার কৃষক শামসুল হক বলেন, ডিমলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে এই বীজ দিয়েছিলো, আমি ক্ষেতে ছিঁটালে ১/২টা সরিষার গাছ হলেও বাকিগুলোর কোন গাছ হয়নি। সরিষা চাষি তরিকুল ইসলাম জানান, কৃষি প্রণোদনার আওতায় ডিমলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের এই বীজ দেয়া হয়েছে। এই বীজে পরবর্তী বীজ তৈরি করার জন্য লাগিয়ে একটি গাছও ওঠেনি। আমার জমিটা পড়ে থাকবে, আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি অভিযোগ করেন, এ বছর আমাদের কারও সরিষা হবে না, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। একই এলাকার কৃষক আবুল কালাম বলেন, প্রণোদনার বীজ কোনো কাজে আসছে না। ২ বিঘা জমিতে সরিষার বীজ ফেলেছিলাম ২/১টা চারা বাদে কোন গাছ হয়নি। আমি গরিব মানুষ এর ক্ষতিপূরণ চাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মোঃ সেকেন্দার আলী বলেন, সঠিক পরিচর্যা ও সময় মতো হয়তো সেই সরিষা চাষিরা বীজ রোপণ করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কোন ক্ষতি পুরণ পাবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি তিনি দেখবেন।