রাজশাহীর বাঘায় সরেরহাট শিশু কল্যাণ সদন ও মমতাজ -আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য অবকাঠামোগত নির্মাণ, আসবাবপত্র, উন্নত খাবার পরিবেশন সহ উন্নত শিক্ষার লক্ষ্যে ১৪ জানুয়ারী শনিবার একটি চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে এইচআরএম টেক্সটিল, জিএমবিএইচ, সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনকে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল(বাঁকা আরসি প্যারাডাইস)এর সহযোগিতায় ৫০,০০০হাজার ইউএস ডলার প্রদান করে।
বাংলাদেশী টাকায় তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ লক্ষ টাকার বেশি। সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডাক্তার শামসুদ্দিন সরকার ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সামসুন্নাহারের হাতে এই চেক তুলে দেওয়া হয়।
উপজেলার সরেরহাট শিশু কল্যাণ সদন ও মমতাজ -আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন প্রাঙ্গনে আয়োজিত চেক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- রাজশাহী বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির পিতা মো. সামসুদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড ও এইচআরএম টেক্্রটিল জিএমবিএইচ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকরুল কবির রিপন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ডাক্তার শামসুদ্দিন সরকার , বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল আলম, গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুজিত কুমার পান্ডে বাকু। উপস্থিত ছিলেন, ডাক্তার শাসুদ্দিনের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা, ইউপি সদস্য কামাল হোসেন,বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিঞাসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গ।
বক্তব্যেকালে ডাক্তার শমেস উদ্দিন সরকারকে বাবা আর মেহেরুন্নেছাকে মা সম্বোধন করে ফখরুল কবির রিপন বলেন, বিগত আট বছর ধরে ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনে সহযোগিতা করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে এই মহান উদ্যোগে যোগদান করে এইচআরএম টেক্সটিল জিএমবিএইচ। সেই ধারাবাহিকতায় আবারো ৫০,০০০হাজার ইউএস ডলার প্রদান করেন।
তিনি জানান, এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত এবং অন্যতম বৃহত্তম বায়িং হাউজ প্রতিষ্ঠান। এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেডের সহযোগী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এইচআরএম টেক্সটিন জিএমবিএইচ স্টুড গার্ড ২০১৭ সাল থেকে জার্মানিতে পথচলা শুরু করে । যার মূল উদ্দেশ্য হলো জার্মানিতে বিশ্বমানের ফ্যাশনেবল কর্পোরেট পোশাক সামগ্রী বিপণন এবং ওয়ার্ক ওয়ার বিক্রয়কারী সংস্থা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিশ্রুতি হিসাবে এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড বাংলাদেশ অসহায়দের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে।
মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, তিনি নিজে ও তার ছেলে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শুভাকাঙ্খিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছে। প্রথমত এতিমদের রক্ষায় প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রয় করতে হয়েছে ডাক্তার শামসুদ্দিনকে। প্রথম দিকে আয় বলতে ছিল মেহেরুন্নেসার সেলাই ফোঁড়া আর ডাক্তার শমেসের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ। শেষ সম্বল জায়গা জমি হারিয়ে শমেস-মেহেরুন্নেছা দম্পতি এখন বসবাস করছেন এতিম শিশু আর বয়স্কদের সাথে তার গড়া প্রতিষ্ঠানেই। এখানে যারা থাকেন তারা সকলেই ডাক্তার শমেসকে বাবা আর মেহেরুন্নেছ কে মা বলে ডাকেন।
জানা যায়, ১৯৮৪ সালে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও ২০১৭ সালে মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠান দু’টি রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রামে অবস্থিত। এখানে ঠাঁই পেয়েছে ১৩০ জন এতিম শিশু ও ৪৪ জন বৃদ্ধ । বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডাক্তার শামসুদ্দিন জানান, এর মধ্যে সরকারি সহায়তা পায় ১০০ জন শিশু। তিনি জানান, প্রথমত ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে প্রতিষ্টান গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে জমির পরিমান ৫২ শতাংশ ।
এ সময় মেহেরুন্নেছা বলেন, আমার উদরে জন্ম নেওয়া সন্তানসহ প্রতিষ্ঠানের সকলেই আমার সন্তান। আমি তাদের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই।