শিরোনাম
বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে দুই বাংলাদেশী যুবকক আটক। গার্ডকে মারতে এসে আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা, ৫ জন গ্রেফতার। বৃষ্টিতে ‘বিদ্যুৎবিভ্রাট’রাণীশংকৈলে মোমবাতির আলোতে এসএসসি পরীক্ষা। ডিমলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দুর্নীতির অভিযোগে বদলি। মাধবপুরে এসএসসি সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে ৩৫ জন অনুপস্থিত। কালিয়াকৈরে আগুনে পুড়ে গেল ৩ টি ঝুটের গোডাউন। গাঁজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে তাহিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। রায়পুরায় ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম। ইনডাকশান প্রশিক্ষণ ডিজি এ্যাওয়ার্ড পেলেন নাজমুল হক। পরিবেশ দুষণরোধে পলিথিনের ব্যবহার বর্জন ও প্লাষ্টিকের পুন:ব্যবহার জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন।
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ অপরাহ্ন

ডিমলায় তিস্তা নদীতে জেগে উঠা বালুচড় কৃষকের কাছে এখন সোনার খনি।

রিপোটারের / ১৭২ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের তারিখ ও সময় : শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২

 ডিমলা ( নীলফামারী) প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডিমলায় ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খর স্রোতা তিস্তা নদীর জেগে উঠা চড় কৃষকের কাছে এখন সোনার খনি। সেখানে শুধু ধু-ধু বালুচর। কয়েকমাস আগে যে নদীর বুকে অথৈই পানি আর পানি। আর এখন সেখানে পানি শুকিয়ে চড় জেগে উঠায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। তাদের বুকভরা আশা চরের বালু মাটিতে ফলবে সোনার ফসল। সোনার ফসল তো নয় এ যেন সোনার খনি। ঘুচবে তিস্তার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হওয়া মানুষের ভাগ্যের চাকা। উন্নত হবে পারিবারিক জীবন যাপন। উচ্চ শিক্ষিত হবে চরাঞ্চলের অবহেলিত পরিবারের ছেলে-মেয়ে।

তিস্তা নদী বেষ্টিত দেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা ডিমলা। ডিমলা উপজেলাকে তিস্তা নদীর প্রবেশদ্বার বলা হয় । উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ছয়টির উপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। বয়ে চলার খেয়ালিপনায় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তিস্তা কখনো কখোনো আশীর্বাদ আবার কখনো কখোনো অভিশাপ হিসেবে আভির্ভূত হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় বন্যা আর তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে দূর্যোগ নেমে এসেছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা ও পরিবেশে। বর্ষায় টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রতি বছরই ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয় উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ির একাংশ, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেখা দেয় নতুন দূর্যোগ। আগ্রাসী রূপে হানা দেয় তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গন। তিস্তার তীব্র ভাঙ্গনে ফসলি জমি এখন ধূ-ধূ বালুচর। জীবন জীবিকার তাগিদে টিকে থাকতে বালুচরে চাষাবাদ করে ফসল ফলানোর সংগ্রামে নেমেছেন চরাঞ্চলের কৃষক। ধু-ধু বালুচরেই চরাঞ্চলের মানুষের নতুন স্বপ্ন বুনা। সেখানে ভুট্টা, সরিষা, গম, পেঁয়াজ, রসুন, শীতকালীন শাক-সবজি, আলু, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চরাঞ্চলের কৃষক।

পুর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকার তিস্তার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা নদীর বুকে ধু-ধু বালুচরে ভুট্টা, সরিষা ও গম চাষাবাদ করছেন। চর খড়িবাড়ির কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, আমার সব ধানিজমি সর্বগ্রাসী তিস্তা নদীর পেটে চলে গেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নদীতে চড় জেগেছে। আমার আর কোন জমি নেই এখন নিরুপায় হয়ে বালু জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি। একই এলাকার হযরত আলী বলেন, আমার পনেরো বিঘা জমির মধ্যে তেরো বিঘা জমি নদীর বুকে বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাত্র দুই বিঘা জমি রয়েছে। তা-ও বালুচর। তাতেই বীজ সার কিনে ভুট্টা চাষাবাদ করছি। খলিলুর রহমান নামের অপর এক কৃষক বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। কৃষি অফিস থেকে সরকারি কৃষি প্রণোদনার ভুট্টার বীজ, সার পেয়েছি। তাই দিয়ে এবার চরের দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করছি।

খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের বাইশ পুকুর ও কেল্লাপাড়া এলাকার কৃষক মোতালেব হোসেন ও দুলু শেখ জানান, এবারের বন্যায় আমাদের ২০-২৫ বিঘা জমিতে বালু পড়েছে। সেই জমিতে আমরা ভুট্টা চাষাবাদ করছি। জমিতে ভুট্টার বীজ বপনের প্রায় ২৫ দিন হয়েছে। আপাতত খেতের অবস্থা ভালোই দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে। আশাকরি এবার ফলন ভালো হবে।

উপজেলায় তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বললে অধিকাংশ কৃষক সংবাদকর্মীকে জানান, প্রতিবছর বন্যা ও তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গনের ফলে জীবন-জীবিকায় টিকে থাকতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। তিস্তার করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে তিস্তা নদীর মহা-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চান নদী পাড়ের হাজারো পরিবার।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দার আলী জানান গত বছর ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবারে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এবার উপজেলায় ১৩ হাজার ৪ শত ৫৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় ১২০ হেক্টর জমিতে নয়শত কৃষকের মাঝে ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। রবি মৌসুমে চাষাবাদের বিষয়ে আমরা কৃষকদের দোড় গোড়ায় পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে ও যেকোনো পরামর্শের জন্য উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর