দীর্ঘ এক বছর ধরে সার নিয়ে চলছে মহা কারসাজি। চলতি রোপা আমন, বর্তমানে আলু চাষের জন্য সারের দূর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে কৃষি ভান্ডার নামে খ্যাত রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মহা সিন্ডিকেটের কবলে সার। যেভাবে হোক সার পাক কৃষকরা, বাহির থেকে, অন্য কোথা থেকে এনে বিক্রি হোক ঘোষনা পায় সার কীটনাশক ব্যবসায়ীরা। প্রতি নিয়ত দিনরাত আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে বাড়তি দামে সার নিয়ে এসে দ্বিগুন দামে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে পটাশ ডিএপি সার। আর এমন মহা সংকটের সময় খোড়া অজুহাতে তালন্দ বাজারে চৌধুরী ট্রেডার্স বা বালাইনাশক ব্যবসায়ী মনিরুলের ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৭০ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এমনকি জব্দকৃত সার পুনরায় মনিরুল অকশানে কিনে নেয়। এতে তার মোট ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার ভূমি এসিল্যান্ড আদিবা সিফাত। অথচ একই বাজারে প্রকাশ্যে বাহির থেকে সার এনে লাবনী ট্রেডার্সের মালিক গণেশ ও বিশ্বনাথ ট্রেডার্স মালিক কাজল দেদারসে বাড়তি দামে বিক্রি করলেও রহস্য জনক কারনে নিরব সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর বলেও স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ। গত ১৬ নভেম্বর বুধবার দুপুরের আগে ঘটে জরিমানা আদায়ের ঘটনাটি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এমন দ্বিমুখী কর্মকান্ডে চরম বিব্রত।
গত ১৬ নভেম্বর বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, তানোর পৌর এলাকার তালন্দ বাজারের বালাইনাশক ব্যবসায়ী মনিরুল দোকানে নিরবতা নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। বেশকিছু স্থানীয় লোকজনও ছিলেন। অনেকেই বলেন সার নিয়ে মহা কারসাজি চলছে। যা দিবালোকের মত পরিস্কার। সরকারের বরাদ্দকৃত সার ন্যায্য দামে পেতে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হচ্ছে। তাও চাহিদা মত সার মিলছে না। বাধ্য হয়ে সাব ডিলার ও বালাইনাশক ব্যবসায়ীরা আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে বাড়তি দামে সার এনে বিক্রি করছেন। মাঝে বালাইনাশক ব্যবসায়ীদের সার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর বাহির থেকে সার আনার অনুমতি দিয়েছেন বলেই তারা আনছেন এবং কৃষকরা পাচ্ছেন। সরকারী বরাদ্দের সারের আসায় থাকলে চাষাবাদ হবে না। আবার সার নিয়ে রয়েছে দলবাজি। শুধু সমস্যায় প্রান্তিক চাষীরা। যারা ৫০. ৭০ কিংবা ১০০. ২০০ এমনকি ৫০০, ১০০০ বিঘা জমিতে প্রজেক্ট করেন তাদের সারের কোন সমস্য নাই। যত মরন প্রান্তিক আলু চাষী যারা নিজের ২,৫ বা১০ বিঘা জমিতে আলু করবেন তাদেরই সারের সমস্য।
গত ১৬ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যার পরে কেশরহাট থেকে একট্রলি সার আটক করে মালারমোড় নামক স্থানে। আটকের পর কৃষকরা মেমো দেখতে চাইলে কোন কিছুই দেখাতে পারেন নি। এমন অভিযোগের ভিত্তি সরেজমিনে এসে সত্যতা পেয়ে অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কামরুল হাসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অফিসারের সাথে কথা বলেন। তালন্দ বাজারে মেমো না থাকার কারনে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন, তাহলে এখানে হবে না কেন প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর দিতে না পেরে অফিসারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। সার গুলো কেশরহাট এলাকার শফি নামের এক ব্যক্তির। তিনি পারিশো দূর্গাপুর এলাকায় ১০০ বিঘা আলুর প্রজেক্ট করছেন। শফি জানান বাড়তি দাম দিয়ে কেশরহাটের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। ন্যায্য মুল্যে লাইনে দাড়িয়ে দুএক বস্তা করে সার নিতে হবে। তাহলে কিভাবে চাষাবাদ হবে।
গত ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এক কৃষক জানান, তালন্দ বাজারের বিশ্বনাথ ট্রেডার্সের মালিক কাজলের বাড়িতে শতাধিক পটাশ সার রয়েছে। বাড়ি থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।
জরিমানা দেওয়া বালাইনাশক ব্যবসায়ী মনিরুল জানান, আমি নিজেই আলু করি, এজন্য বাহির থেকে আনা হয়েছে। সবাই নিয়ে এসে বিক্রি করছে। কিছুই হল না আর আমাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হল, আবার ৭০ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করেন, আমিই পুনরায় অকশানে ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। তানাহলে আলু করতে পারব না। কি বলার আছে, আমি প্রতিহিংসার স্বীকার। নতুন না দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। অনেকে অনুরোধ করার পরও শুনেন নি।
বিসিআইসির এক ডিলার জানান, গত বুধবার কিংবা বৃহস্পতিবারে পটাশ সার আসার কথা ছিল। কিন্তু আগামী ২৭ নভেম্বরের আগে কোন পটাশ আসবে না।
আবার পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাব ডিলার জসিম বাড়ি থেকে দেদারসে পটাশ সার বিক্রি করছেন
অতিরিক্তি কৃষি অফিসার কামরুল হাসান জানান, ব্যবসায়ী মনিরুলের বিরুদ্ধে কৃষকরা অভিযোগ করেছিল এবং সেটার সত্যতা পাওয়া যায়।
কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, কোন ব্যবসায়ী বেপরোয়া সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করলে এবং অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা উপপরিচালক(ডিডি) মাজদার হোসেনকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।