সুদখোরের ফাঁদে নিঃস্ব পরিবার চেক জালিয়াতির মামলায় হাতিয়ে নিয়েছে লাখ টাকা।
ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য দাদন ব্যবসায়ী আবু তাহেরের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে দুই লাখ টাকা সুদে নেন দবিরুল ইসলাম। শর্ত ছিল প্রতি মাসে সুদ হিসেবে দশ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী সুদের দশ হাজার টাকা করে আঠারো মাসে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন দবিরুল। এরপর হঠাৎ অসুস্থ্য হওয়ায় বাকি টাকা আর তিনি দিতে পারেননি। টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হন আবু তাহের। তিনি ফাঁকা চেক স্ট্যাম্প পূরণ করে ইউনুস আলী নামে একব্যক্তিকে দিয়ে ঠাকুরগাঁও আদালতে দবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন। টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার হন দবিরুল। কারাগার বাসও করেন। পরে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে গেলে আদালত থেকে জামিন পান।
দবিরুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিবিষ্ণুপুর গ্রামের সমির উদ্দীনের ছেলে। অন্যদিকে আবু তাহের ও ইউনুস আলী একই এলাকার বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী দবিরুল ইসলাম জানায়, ২০২০সালে করোনার সময় আমি আবু তাহেরের কাছে সুদে দুই লাখ টাকা নেয়। ছয় মাস পর আমার বাবা এক লাখ টাকা দেয় আর তার এক মাস পর এক হুজুরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দেয় আবু তাহেরকে। পরে বাকি ৫০ হাজার টাকা আমি দিতে গেলে আবু তাহের আরো দেড় লাখ টাকা চেয়ে বসেন। না হলে সে আদালতে মামলা করবে। দেড় লাখ টাকা ছয় মাস আগে দিয়েছি একথা বললে তাহের বলেন ওই টা সুদ। আসল আরো দুই লাখ টাকা দুইদিনের মধ্যে না দিলে আদালতে পাঁচ লাখ টাকার মামলা করবো। পরে আমি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে বসতে চাইলে তাহের না বসে ইউনুস নামে একব্যক্তিকে দিয়ে আদালতে আমার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলা করেন।
দবিরুল আরো বলেন, আমি টাকা নিয়েছি আবু তাহেরের কাছে আবার দেড় লাখ টাকাও দিয়েছি। কিন্তু ইউনুস আমার নামে পাঁচ লাখ টাকার মামলা করলো কেন? আমি তো ইউনুসকে চিনিনা। ইউনুসকে? আমি প্রায় নিঃস্ব। আমি যেন সুষ্টু বিচার পাই আদালতের কাছে এটাই অনুরোধ।
ভুক্তভোগীর বাবা হাজী সমির উদ্দীন বলেন, আমার ছেলে দবিরুল ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের জন্য আবু তাহের কাছে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প জমা দিয়ে দুই লাখ টাকা নেয়। সেই টাকার সুদ ও আসল টাকা প্রায় সব দেওয়া হয়েছে, অল্প কিছু টাকা বাকি আছে। সেটাও আমরা দিতে চাইছি। কিন্তু টাকাটা দিতে দেরি করায় আবু তাহের ইউনুসকে দিয়ে আদালতে মামলা করায়। আর সেই মামলায় আমার ছেলে কয়েক দিন জেলে ছিলো। সে সুদ ব্যবসায়ীর সঙ্গে জড়িত। তার কারণে এলাকার অনেক মানুষ অতিষ্ট। ইউনুসের কাছে তো কোন টাকা নেয়নি। তাকে আমরা চিনিনা। ইউনুস কেন মামলা করলো? আমি চাই তদন্তের মাধ্যমে আসল কাহিনী বেরিয়ে আসুক।
সুদ ব্যবসায়ী আবু তাহের ও ইউনুস আলীর অত্যাচারের অভিযোগে সত্যতা মিলেছে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, ‘ আবু তাহের ও ইউনুস আলী দুজনেই সুদের ব্যবসা করে। সময় মতো টাকা দিতে একটু দেরি হলে গবির মানুষের উপর অত্যাচার করে। আবু তাহের নিজে বাদি না হয়ে অন্য মানুষকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা করে। আমরা চাই তার বিচার হোক।
অপর দিকে ইউনুস আলী মামলার এজাহারে নিজেকে ধান চাল ব্যবসায়ী দাবি করলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিনি কোন ব্যবসার সাথে জড়িত নন। তিনি একজন শ্রমিক। টাকার লোভে মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী করাই তার পেশা বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে আবু তাহের এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেকের কাছে আমি টাকা পায়। তবে দবিরুল ইসলামের সাথে আমার কোন লেনদেন হয়নি। অন্যদিকে মামলার বাদি ইউনুস আলী সাথে কথা বললে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।
রুহিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: সোহাগ বলেন, কয়েকদিন আগে ইউনুস আলী নামে এক ব্যক্তি দবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে টাকা আত্নসাতের অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেন। আমার জানামতে দবিরুল টাকা নিয়েছে আবু তাহেরের কাছে ইউনুসের কাছ থেকে নয়। সুদের টাকা সময় মত পরিশোধ না করায় তিনি মামলা করেছে। কিন্তু টাকা হলো আবু তাহেরের ইউনুস আলী কেন মামলা করলো বুঝলাম না। স্থানীয় পর্যায়ে বসে এটা সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ওসি মো: সোহেল রানা বলেন, সুদের টাকা দিতে না পারায় আদালতে মামলা হয়েছে এটা আমার অজানা। তবে ভুক্তভোগীর সাথে কথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।