বড় ভাইয়ের নাম ও সনদ ব্যবহার করে ১৯ বছর যাবত ছোট ভাই পুলিশের এএসআই।
(ছাতক সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
আলোচনা ও সমালোচনার উর্ধে থেকে জাল-জালিয়াতিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড নির্মুলে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। সেই বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে ২০০৩ সালে অন্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে সু-কৌশলে পুলিশে চাকুরী নিয়েছেন এক ব্যাক্তি। প্রায় ১৯ বছর ধরে তিনি পুলিশে চাকুরী করছেন। কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে তিনি এএসআই।এমন ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরে দায়ের করা এক লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়াবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ঝুমগাও ইসলামপুর গ্রামের মৃত মোক্তল হোসেন মজুমদারের ৫ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে। তার প্রথম পুত্র বাবুর্চি রুস্তম মজুমদার, দ্বিতীয় পুত্র স্কুল শিক্ষক মিজান মজুমদার, তৃতীয় পুত্র পল্লী চিকিৎসক মোশাররফ হোসেন মজুমদার, পুলিশের এএসআই পদে চাকুরীরত চতুর্থ পুত্র মোবারক হোসেন মজুমদার ও পঞ্চম পুত্র শ্রমিক মোতালিব হোসেন মজুমদার।
বর্তমানে তার তৃতীয় ও চতুর্থ দুই পুত্রের নাম এখন মোশাররফ হোসেন ও মোশারেফ হোসেন মজুমদার। ব্যবধান শুধু একটি বর্ণ ও বংশগত টাইটেলের। এদের মধ্যে বড় ভাই মোশাররফ হোসেন থেকে মোশারেফ হোসেন মজুমদার হয়েছেন। আর ছোট ভাই মোবারক হোসেন থেকে হয়েছেন মোশাররফ হোসেন। মোবারক মোশাররফ হোসেনের সনদ নিয়ে বড় ভাইয়ের নামে চাকুরী করছেন পুলিশে। ধারনা করা হচ্ছে ছোট ভাইয়ের চাকুরী সুরক্ষা দিতে বড় ভাই মোশাররফ তার নামের একটি বর্ন পরিবর্তন পূর্বক বংশগত টাইটেল যুক্ত করে মোশারেফ হোসেন মজুমদার নাম ধারণ করেছেন। যদিও বর্তমানে এনআইডির তথ্য অনুসারে মোবারক এখন পুলিশের এএসআই মোশাররফ আর মোশাররফ এখন মোশারেফ।
জানা,যায় ২০১৭ সালে এনআইডি সংশোধন করে মোবারকের বড় ভাই মোশাররফ থেকে মোশারেফ করা হয়েছে। এনআইডি সংশোধনের পুর্বে ২০১৬ সালে মোশারেফ ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোশাররফ ছিলেন। এমন কি তার স্ত্রী তাসলিমা বেগমের এনআইডিতে স্বামীর কলামে রয়েছে মোশাররফ, তার মাদরাসা পড়ুয়া মেয়ে ইসরাত জাহান জেনীর ভর্তি তথ্যেও বাবা মোশাররফ। এছাড়াও
স্থানীয় হকনগর বাজার ব্যবসায়ী কমিটির তালিকা, সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থীর পোষ্টার ও উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের তালিকায় যুগ্ম আহবায়কসহ বিভিন্ন তালিকায় তিনি মোশাররফ নামই পাওয়া গেছে।
এনআইডির তথ্য মতে মোবারক মোশাররফ হলেও ২০০০ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দোয়ারাবাজারের বোগলা রুসমত আলী উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে কলেজ) থেকে ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন মোক্তল হোসেনের চতুর্থ পুত্র মোবারক হোসেন। যার রোল নম্বর ১০৮৮৬৬ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৩১০৮৬। সনদে জন্ম তারিখ ১২মার্চ ১৯৮২ইংরেজী।
তার আপন বড় ভাই মোশাররফ হোসেন ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে ভূটুয়া শ্রীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা আনন্দপুর কুমিল্লা থেকে ১৯৯৬-৯৭ সালে দাখিল পাশ করেন। যার রোল নম্বর ১২২৫৭৮ ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৭৫২৫৯। সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ৩ জানুয়ারী ১৯৮৪ইংরেজী। বয়স অনুযায়ী মোবারক ছোট হলেও সনদ অনুযায়ী মোশাররফ মোবারকের দুই বছরের ছোট। দুই ভাইয়ের একই নামের ভয়ঙ্কর জাল-জালিয়াতির তদন্তে মাঠে রয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর) সার্কেল শুভাশীষ ধর।
আপন দুই ভাই এখন মোশাররফ এবং মোশারেফ মজুমদার। প্রশ্ন হল মোবারক নামের এসএসসি পাশ সনদের সেই ব্যক্তি এখন কোথায়? যদিও এএসআই মোশাররফের দাবী তার ডাক নাম মোবারক তাহলে এবং এই সনদও তার। প্রশ্ন হল সনদে থাকা নাম,ডাক নাম হয় কিভাবে।তিনি মোশাররফ হোসেন নামে পুলিশের চাকুরী করছেন কিন্তু এলাকায় মোবারকের বড় ভাই ডাক্তার মোশাররফ নামে পরিচিত।
মোবারক ২০০১ সালে পুলিশে ভর্তি হলেও অনিবার্য কারনে ট্রেনিং এ অংশ নেননি। পরবর্তীতে তিনি পুলিশে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলে নিজ সনদে নির্ধারিত বয়স থেকে বেশি হওয়ায় এবং বড় ভাই মোশাররফের সনদে বয়স কম হওয়াতে তার সনদ ও নাম ব্যবহার করে ২০০৩ সালে মোশাররফ নামে পুলিশে যোগ দেন মোবারক। সে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অধিনস্থ একটি পুলিশ ফাঁড়িতে এএসআই পদে কর্মরত রয়েছে। চাকুরীতে যোগদানের পর ২০০৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রনয়নের সময় নিজের ফিঙ্গার দিয়ে এনআইডিতে স্থায়ীভাবে তিনি মোবারক থেকে মোশাররফ বনে যান। এতে তার গ্রামের ঠিকানাও উল্লেখ না করে সিলের টিকানা ব্যবহার করেছে।
প্রায় ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও এলাকাবাসি তার নাম মোশাররফ বলে কখনও শুনেন নি। তাকে মোবারক ও তার বড় ভাইকে ডাক্তার মোশাররফ নামে চিনেন স্থানীয়রা। দফায় দফায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলা সিনেমাকে হার মানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সরজমিন হকনগর বাজারে গেলে পুলিশ কর্মকর্তার বড় ভাই বর্তমান মোশারেফ হোসেন এর সাথে তার দোকানে দেখা হয়।তিনি মজুমদার ডেকোরেটার্স নামে অনেকটা খোলামেলা ভাবে করছেন ফার্মেসি ব্যাবসা।
ডেকোরেটার্সের আড়ালে ফার্মেসীর ফার্মেসী ব্যাবসা বা ডাক্তারির কোনো সনদও নেই বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে মুহুর্তের মধ্যে বাজার ও এলাকার লোকজন ভিড় করেন। সেখানে সরাসরি যা বল্লেন এলাকাবাসি তাতে মোশাররফের কোনো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং তার চোখে মুখে ছিল প্রচণ্ড চাপ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল কাদির বর্তমান এনআইডির তথ্য অনুসারে তাদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে মুখ ফুসকে প্রথমে পুলিশের নাম মোবারকই চলে আসে।এছাড়াও স্থানীয় অনেকে মোবারক আর মোশাররফ নামই বলেছেন। বাংলাবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জসিম মাষ্টারও একই কথা বলেছেন।
পাশাপাশি নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন সিলেটে স্থানীয়দের মামলায় ঢুকিয়ে হয়রানি করতেন মোবারক।
অভিযুক্ত এএসআই মোশাররফ হোসেন ওরফে মোবারক এসব অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করলেও মোবারক নামের এসএসি সনদটি সটিক ও তার বলে স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার জগন্নাথপুর সার্কেল শুভাশীষ ধর বলেন,তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হয়েছে। খুব শীগ্রই এর প্রতিবেদন দেওয়া হবে।