রাণীশংকৈলে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী কৃষাণীরা !
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কেঁচো সার উৎপাদন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য বদল করেছেন
অর্ধশতাধিক কৃষাণী।
গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও নিজেদের চাহিদা পূরণ করে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করছে তাদের উৎপাদিত কেঁচো সার।
প্রতিমাসে এই খামার থেকে তারা আয় করছেন লাখ টাকা। ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যে নিজেদের সফল খামারি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও তারা।
এদিকে কৃষাণীর তৈরীকৃত কেঁচো সার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলাকাতে। তা দেখে এখন উপজেলার অনেক যুবক ও নারীরা বিষমুক্ত এ জৈব সার উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ছেন।
জানা গেছে, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যায় করতে হয় কৃষকদের। আর এই ব্যায় কমিয়ে আনতে কেঁচো দিয়ে তৈরীকৃত সার উৎপাদন শুরু করেন তারা। হাতের নাগালে ভালো মানের সার পাওয়ায় এখন কৃষকরা তা কিনে নিজ জমিতে প্রয়োগ করছেন। ফলে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষক মো. আশরাফ বলেন, ‘এ বছর কেঁচো সার দিয়ে ধান ও মরিচের আবাদ করেছি। ফলন অনেক ভালো।’
অপর কৃষক লুতফর হোসেন বলেন, কৃষাণীদের উৎপাদিত সার দিয়ে ধান, ভুট্রা, মরিচ ও মুগডাল আবাদ করেছি। অন্য সারের তুলনায় অর্ধেক খরচ হয়েছে।’
কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (সিডিএ) দিনাজপুর এর আর্থিক সহায়তায় উপেজেলার গাংগুয়া গ্রামে জৈব কৃষি চর্চা নারী উন্নয়ন জনসংগঠনের ৩৬ জন নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গত বছর এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ সংগঠনের সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে কেঁচো সার তৈরির শেড। বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে এটা নিয়েই ওই নারীদের ব্যস্ততাপূর্ন সময় কাটে। কারণ কেঁচো সার উৎপাদন ও বিপণনে তাদের সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা।
জনসংগঠনের সদস্য হাজেরা জানান, সিডিএ’র সহযোগিতায় গত বছর আমরা ২০ হাউস তৈরি করি। এ শেড থেকে যে সার উৎপাদন হয় সেগুলো বিক্রি আমরা ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এপর্যন্ত আমরা এই শেড থেকে লক্ষাধিক টাকার অধিক কেঁচো সার বিক্রি করেছি।
আশরাফি নামের আরেক সদস্য জানান,
‘কেঁচো, গোবর, কচুরিপানা, কলাগাছ, খড়কুটা দিয়ে মাত্র ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই তৈরী হচ্ছে কেঁচো বা জৈব সার। এলাকার বেশিরভাগ কৃষক এখন অন্য সারের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন এই সার।’
‘রিং, কারেন্ট ও হাউজ পদ্ধতিতে এ সার উৎপাদন করছি। বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কেঁচো সারের কোন বিকল্প নেই
পয়গাম আলী নামের এক সদস্য জানান, শেডের ভিতরে অর্থাৎ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন যেমন সহজ তেমনি এর চাহিদাও বেশি। এ কাজ থেকে বিনা ঝামেলায় অতিরিক্ত আয় হয়, পাশাপাশি নিজেদের জমিতেও ব্যবহার করছি এ সার। এর সারের ব্যবহারের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিডিএ’র মহলবাড়ি ইউনিট ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব বলেন, ‘উচ্ছিষ্ট, গোবর, তরকারির খোসাসহ আবর্জনা দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এগুলো ফসলের জন্য খুবই উপকারী। গত বছর আমরা আমাদের এনজিও থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে এই জনসংগঠনের সদস্যদের এ টিনের শেডে ২০টি হাউস তৈরি করে দিই। এখন তারা এখান থেকে সার উৎপাদনের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে আর্থিকভাবে ভালোই স্বাবলম্বী হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘কেঁচো সারটি ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক ভালো। এ সার ব্যবহারের খরচও অনেক কম। এছাড়া সারটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে এবং কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।